আতাউস সামাদের স্মরণসভায় বক্তারা: বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে হবে

ষাটের দশকের শুরু থেকে আমৃত্যু সাংবাদিকতার মাধ্যমে গণতন্ত্র ও গণমানুষের পক্ষে সাংবাদিকতা করেছেন আতাউস সামাদ। মানবাধিকার নিশ্চিতে তিনি গণমাধ্যমে এবং মাঠে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করার মধ্যদিয়ে তিনি প্রতিটি গণআন্দোলনে অনুকরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রতি সম্মান জানাতে হলে সত্য-তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা অব্যাহত রাখতে হবে।

বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।  

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আতাউস সামাদ পারিবারিকভাবে, শিক্ষাগতভাবে, চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে সৎ আলোকিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ধর্মপ্রাণ ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ নন। ১৯৭০-এ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্লোগান দেয়া, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং যখনই সরকার স্বৈরাচার হয়েছে, সাংবাদিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর ঘটনাবলীতে তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয়। শেখ হাসিনার কুশাসনকালে তাকে পড়তে হয়েছে রোষানলে, এরশাদের আমলে জেল খেটেছেন। তিনি ও বিবিসি একাত্মা হয়ে গিয়েছিল। আতাউস সামাদ একজন গুরুত্বপূর্ণ গণবুদ্ধিজীবী ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাসের বিভিন্ন জায়গায় আতাউস সামাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মানুষের অধিকার আর রাষ্ট্রের মুক্তির জন্য লেখালেখি এবং কিছু একটা করার তাগিদ সর্বদাই তার মনস্তত্ত্বে ছিল। মানবাধিকার নিশ্চিতে তিনি গণমাধ্যমে এবং মাঠে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
আতাউস সামাদকে দেশের সাহসী সাংবাদিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, তিনি সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন। সত্য সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতেন। সাংবাদিকতার জন্য যিনি জেলে গিয়েছেন এমন মানুষ ইতিহাসে কম। এরশাদ আমলে আতাউস সামাদ কারাবরণ করেছেন। সাংবাদিক সামাদ আমৃত্যু একজন রিপোর্টার ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কিছু নিজে না দেখে তিনি সংবাদ করতেন না। ’৯৮ ও ’৮৮ এর বন্যার সময়ে তিনি নিজে ঢাকা থেকে বন্যাক্রান্ত জায়গায় গিয়ে রিপোর্ট করেছেন। আমরা কিন্তু অনেকেই শুনে সাংবাদিকতা করি, সাংবাদিক সামাদ সেটা করতেন না। সামাদ ভাই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তার থেকে ৪০ বছর কম বয়স যাদের তাদের বন্ধু ছিলেন, তার থেকে ২০ বছর বেশি বয়স যাদের তাদেরও বন্ধু ছিলেন।

আতাউস সামাদের সাংবাদিকতার স্মৃতিচারণ করে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ বলেন, বিকাল হলেই বিবিসিতে যে কণ্ঠ শোনার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকতাম তিনি হচ্ছেন আতাউস সামাদ। সেই কণ্ঠটি এখনো মনে হয় কানে বাজে।

তিনি বলেন, এত বড় মাপের সম্পাদক-সাংবাদিক হয়েও তিনি তরুণ রিপোর্টারের মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন। একেবারে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তার মধ্যে রিপোর্টারের চরিত্র ছিল।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পথপরিদর্শক হিসেবে আতাউস সামাদ নেতৃত্ব দিয়েছেন- উল্লেখ করে ছড়াকার ও জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, সাংবাদিক আতাউস সামাদ ছিলেন আমাদের আইকন। সাংবাদিকতার মধ্যদিয়ে তিনি দেশের সব আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

আলোকচিত্র সাংবাদিক রফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও কবি শামীমা চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি একেএম মহসিন, প্রয়াত আতাউস সামাদের ভাতিজা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.