হাসিনার পতনে সবচেয়ে খুশি কে? by শওকত মাহমুদ
স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলার সারিতে দুই নম্বর নোবেল জয়ী ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের অনারারি সদস্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেধড়ক মামলাবাজি করে তাকে জেলে পোরা এবং আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তাকে কলঙ্কিত করার হীন প্রয়াস বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়ে গেছে। জাতির এই দুই সম্পদকে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার হুংকারও দিয়েছিলেন চরম হিংসুটে শেখ হাসিনা। পালিয়ে যাবার আগ-মুহূর্ত পর্যন্ত দমে দমে বলে গেছেন-ড. ইউনূস যেন কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে না পারেন। যাদেরকে বলেছেন তারা তার কথা রাখেননি। আর বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর শেখ হাসিনা যতো কদর্য উচ্চারণ ও আচরণ করেছেন, বোধ করি বিশ্বে আর কোন গণতন্ত্রপ্রেমী রাজনীতিক নেই এমনটি সয়েছেন। এই নেত্রীকে যারা চেনেন ও জানেন, তারা বলেন, বেগম জিয়া একটি দোয়াই সর্বক্ষণ করতেন মৃত্যুর আগে যেন শেখ হাসিনার পতন দেখে যেতে পারেন। মহান আল্লাহ তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। শেখ হাসিনা তার অবৈধ শাসনে চেয়েছিলেন মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে, অসুস্থ বানিয়ে চিকিৎসা না দিয়ে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মেরে ফেলবেন।
কিন্তু উল্টো তিনি ছাত্র-জনতার রোষানলে বিদায় নিলেন। তার রাজনৈতিক মৃত্যু হলো। সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ধিক্কার। অথচ বেগম জিয়া আছেন, থাকবেন। জীবন্ত কিংবদন্তি। তার দেশনেত্রী উপাধিটা আরও সার্থক হলো।
বাংলাদেশের জনম-যুদ্ধ থেকে শুরু করে তীক্ষ্মতর নৈতিকতায় গণতন্ত্রের আরাধনা, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই, বারংবার বন্দিত্ব, রাজনীতির ও সংসারের দোলাচলের মধ্যে মানুষের অধিকারের জন্য এমন অবিচল সংগ্রামী কোথায় আছে? বাংলাদেশের রাষ্ট্র রাজনীতির মূল মনোযোগ হিসেবে ৪২ বছর ধরে তিনি শিখা অনির্বাণ।
পবিত্র কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ সুরা ইয়াসিন-এ অদ্ভুত এক কথা জানিয়েছেন। ৩৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা হলো তিনি উদ্ভিদ, প্রাণী জগত এমনকি মানুষ যা জানে না, সব কিছু তিনি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াতের সঙ্গে আল্লাহ দিন ও রাত্রি এবং সূর্য ও চাঁদের সৃষ্টি এবং বৈপরীত্যের উল্লেখ করেছেন।
কোরআন শরীফের সুরা কাহাফ-এ বলছেন, মানুষের জীবনের জন্য সকল উদাহরণ ও উপমা তিনি এই গ্রন্থে রেখে গেছেন। সাধারণ বুঝ এ বুঝি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভুবনে আশি দশক থেকে তিনি নাজেল করেছেন বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনা নামে এক জোড়া দু’জন রাজনীতিককে। একজন মজলুম আরেকজন জালেম। আল্লাহ মানুষের মন গঠন করেছেন, অতঃপর ভালো-মন্দ বুঝার শক্তি দিয়ে বলেছেন, যে ভালর আবাদ সেই সফল হবে। আর মন্দের আবাদকারী ব্যর্থ হবে (সুরা আস শামস)। বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনার পার্থক্যটা ওখানেই।
শেখ হাসিনার এই পরিণতি এবং ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান সম্পর্কে যদি কোরআন শরীফে আরও মন দেন, দেখবেন সুরা কাসাস-এর ৪,৫,৬ আয়াতে ফিরআউন সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই ফির-আউন জমিনের বুকে অহংকারী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণিকে সে হীনবল করেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত থাকতে দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। আর আমরা ইচ্ছে করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদেরকে নেতা বানাতে, আর তাদেরকে উত্তরাধিকারী করতে, আর জমিনে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফিরআউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তারা সে দুর্বল দলের কাছ থেকে আশংকা করত।”
আমাদের এখানে কার কী অবস্থান তা সবারই জানা। দুর্বলদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তারা হল ছাত্র জনতা।
No comments