দেবাশীষ আশ্রয় পাননি বৃটেনে, দেশে ফিরে লাশ

বৃটেনে আশ্রয় প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের দেবাশীষ চক্রবর্তী। ফলে তাকে বৃটেন ছাড়ার নির্দেশ দেয় বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেবাশীষ ঠিকই দেশে ফিরে এসেছেন। তবে এর কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে খুলনার রূপসা নদীতে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এখন তার জন্য শোক পালন করছেন অনেক বৃটিশ। তারা তাকে চমৎকার একজন যুবক হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। তারাই বলছেন, দেবাশীষ মনে করতেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে হত্যা করা হতে পারে। এসব নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডের অনলাইন স্টোক-অন-ট্রেন্ট অনলাইন। এতে বলা হয়েছে, দেবাশীষ অবস্থান করছিলেন ইংল্যান্ডের স্টোক অন ট্রেন্ট শহরের কেব্রিজ এলাকায়। তিনি সেখানে যাওয়ার পর আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ওই শহর থেকে বের হয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। তিনি বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসার কয়েক সপ্তাহ পরে নদীতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

অনলাইনটি আরো লিখেছে, কব্রিজে অবস্থান করে হ্যানলি লাইব্রেরিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তার আশ্রয় প্রার্থনা চূড়ান্ত দফায় প্রত্যাখ্যান করা হয় এ বছরের শুরুর দিকে। ফলে তিনি দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হন। তবে তিনি সবসময়ই আতঙ্কে ছিলেন যে, দেশে ফিরলেই তাকে হত্যা করা হতে পারে। ঠিকই দেশে ফেরার কয়েকদিন পরে তিনি নিখোঁজ হন। পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার পরিবার মনে করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার স্মরণে স্টোক অন ট্রেন্ট শহরে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কুপার স্ট্রিটে আশা সদর দপ্তরে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আয়োজন করেছে হ্যানলি ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা আশা নর্থ স্টাফোর্ডশায়ার। এ দাতব্য সংস্থাটি ওই এলাকায় শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের বিষয়ে দেখভাল করে থাকে।

এ বিষয়ে ট্রাস্টি অ্যাঙ্গেলা গ্লেন্ডেনিং বলেছেন, ১০ বছর ধরে আমি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয় দেখাশোনা করি। এ সময়ের মধ্যে একজন বা দু’জনকে বিমুখ হতে হয়েছে। তার অন্যতম দেবাশীষ। তিনি আরো বলেন, তার মৃত্যুতে আতঙ্ক ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে। আবার অনেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অ্যাঙ্গেলা গ্লেন্ডেনিং বলেন, দেবাশীষ আমাদেরকে বলেছিলেন, নিজ দেশে তিনি আতঙ্কিত থাকবেন। তবু তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে। হয়তো তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন তার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে সেই একই রকম পরিণতি অন্যদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন।

এই দাতব্য সংস্থাটির প্রজেক্ট ম্যানেজার গডফ্রে সেমিনেগা (৫৩) বলেছেন, দেবাশীষ ছিলেন চমৎকার একজন মানুষ এবং খুবই বন্ধুবৎসল। তিনি অন্যদের সাহায্য করতে চাইতেন। আশা নামের এই প্রতিষ্ঠানে আইটি দক্ষতা দিয়ে তিনি লোকজনকে সাহায্য করতেন। কারণ, এই দাতব্য সংস্থায় যারা আসেন তারা হয়তো জীবনে কখনো কম্পিউটার ব্যবহার করেন নি অথবা কম্পিউটার দেখেনই নি। তিনি হ্যানলি লাইব্রেরিতেও কাজ করতেন। তিনি একজন উৎসর্গিত মানুষ ছিলেন। তিনি তার দক্ষতার ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তার অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্য মানুষদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাকে খুব ‘মিস’ করবো আমরা।

ওদিকে মৃত্যুর পর দেবাশীষের পরিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গভীর দুঃখের সঙ্গে দেবাশীষের পরিবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘোষণা দিচ্ছে। পুলিশের কাছে ৮ই সেপ্টেম্বর রোববার তার নিখোঁজ হওয়ার কথা রিপোর্ট করা হয়। ৯ই সেপ্টেম্বর খুলনায় রূপসা নদীতে পাওয়া যায় তার মৃতদেহ।
ওদিকে বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, আশ্রয় প্রার্থী সবার আবেদন সতর্কতার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত ‘মেরিট’ যাচাই করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.