হৃদরোগের ভয়াবহ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ

বাংলাদেশে হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে তিনজনের হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরাও। খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণায় জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে; যা মানুষের মৃত্যুহারের ৩১ শতাংশ। ইউরোপীয়দের তুলনায় পাঁচ থেকে সাত বছর আগেই দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগ দেখা দেয়।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যমতে, ৩৫ বছর কিংবা এর বেশি বয়সীর মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত; এর অর্ধেকই এ সম্পর্কে সচেতন নয়। ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ৬৭ ভাগ মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ, ৩০ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী। বাংলাদেশে গত ২০ বছরে হৃদরোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২০ গুণ। কিছুদিন আগ পর্যন্ত দেশে বয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি কিন্তু গত কয়েক বছরে তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের প্রবণতা বাড়ছে। আবার আক্রান্তদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, দেশে বায়ুদূষণ-পানিদূষণ, খাদ্যে ভেজাল, অনিয়ন্ত্রিত-অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, বেকারত্ব, আলস্য সর্বোপরি দৈনন্দিন জীবনযাপনের মানসিক চাপ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। এজন্য নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম, খাদ্যে লবণ ও লাল মাংস বর্জন, পরিমিত আহার, ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ বার্ষিক হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রতিবছরই হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৬ সালের হিসেবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির বহির্বিভাগে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৩৮ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৪ হাজার ৯০৬ জন ভর্তি হয়েছেন। আর ২০১৫ সালে বহির্বিভাগে ২ লাখ ২২ হাজার ১৮৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ৬৩ হাজার ৩৯০ জন ভর্তি হয়েছেন।

দেশে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে তুলনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অনেকটাই কম। এজন্য স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে সরকারিভাবে স্বাস্থ্য সেবার ব্যয় খুব কম। জিডিপির মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়।

No comments

Powered by Blogger.