বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রমে ছিল ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি: -টিআইবি’র গবেষণা

এবারের বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রমে ছিল ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়ম। এমনটাই উঠে এসেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায়। গতকাল রাজধানীর সংস্থাটির কার্যালয়ে ‘বন্যা-২০১৯ মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণকার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন মো. নেওয়াজুল মাওলা, মো. মাহফুজুল হক, অমিত সরকার, এসএম জুয়েল ও মো. জাকির হোসেন খান।
গবেষণায় উঠে আসে, এবারের বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয় ২৮ জেলা। ১০৮ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি পানিবন্দি ছিল ৪০ লাখ মানুষ। পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতির মুখে পড়ে ৯৮৬৮৮ ও আংশিক ১৩৬০১০২টি পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমি ৪৫৯৬৬ হেক্টর ও আংশিক ৯৪১৮৩ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ শতাংশ ফসলি জমিতে পড়েছে বালুর আস্তরণ।
ফলে প্রায় ৩ বছর তারা ফসলহানির মুখে পড়বেন।
গবেষণায় উঠে আসে, ত্রাণ বিতরণ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। স্বজনপ্রীতি, কম দেয়া এবং পাশাপাশি একই পরিবারকে একাধিক বার ত্রাণ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি এসব অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করলে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ত্রাণ পাওয়াদের ৭৩ শতাংশ বলেছেন তারা পরিমাণে কম দিয়েছেন। আর সাহায্য পাওয়া খাবারের মাঝে ছিল না শিশুখাদ্য। ছিল না গো-খাদ্যের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এ ছাড়া গবাদি পশুকে ২ থেকে ৩ দিন পানিতে দাঁড় করিয়ে রেখে পরে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়।
বন্যার ২৪ ঘণ্টা আগে সতর্কবার্তা দেবার দাবি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। তবে জরিপে অংশ নেয়া ৯১ শতাংশ পাননি বলে জানান। গবেষণার আওতাও থাকা ১০ উপজেলার ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ও ১২৭৭ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় বাজেট, লোকবল ও পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বন্যা আক্রান্ত অন্যান্য স্থানে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। চিকিৎসা, পানি, স্যানিটেশন, নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা লক্ষ্য করা যায়নি।
টিআইবি’র তথ্য মতে, চলতি বছরের বন্যায় দেশের ২৮ উপজেলার মানুষের তারা দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে। এবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ১৯৮৮ সালের ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর বন্যার্তরা সহযোগিতা পেয়েছেন খুবই নগণ্য। এক একটি পরিবার ৪ টাকা করেও সাহায্য পেয়েছে। গড়ে বাড়িপ্রতি মিলেছে ২০ টাকা থেকে ৭৭২ টাকা।
বন্যাপরবর্তী এই গবেষণায় আরো বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল ত্রাণ বিতরণের প্রধা। এ ছাড়াও ছিল স্বজনপ্রীতি। এমনকি মন্ত্রীর বন্যা এলাকা পরিদর্শনের টাকা এসেছে ত্রাণের অর্থ থেকে। আর চেয়ারম্যানরা পরিবহন ব্যয় মেটানোর অজুহাতে বিক্রি করেছেন ত্রাণ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্যায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত। আর ছিল বরাদ্দ কম থাকা ও যা বরাদ্দ পেয়েছে তাও সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়নি।
এতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, টিআইবি’র উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

No comments

Powered by Blogger.