দরিদ্রদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আহবান: -জাতিসংঘে প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস

সামাজিক ব্যবসা ভিত্তিক দরিদ্রদের জন্য ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘শূন্য আর্থিক বহির্ভূক্তি’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন নোবেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস। ২৭শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচারের উপর গঠিত আর্থিক খাত কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহবান জানান। জাতিসংঘ কার্যালয়ে কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে এর চেয়ারপার্সন মিস ফিয়োনা রেনল্ড্স ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমিশনের আহ্বায়ক, সহ-আহ্বায়ক ও কমিশনারগণ। কমিশনের অন্যতম সহ-আহ্বায়ক প্রফেসর ইউনূস বলেন, পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আর্থিক সেবা থেকে বঞ্চিত থাকার কারণ কোনো বাজার ব্যর্থতা নয়, এটা পরিস্কারভাবে অর্থনীতির কাঠামোগত ব্যর্থতা। বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষদের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছানোর উপযোগী করে তৈরী করা হয়নি। এই ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষ করে সামাজিক ব্যবসার নীতির ভিত্তিতে দরিদ্রদের জন্য আলাদা ব্যাংক সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

ড. ইউনূস বলেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে পৌঁছাতে একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি গড়ে তুললেও ক্ষুদ্রঋণ এখনো আর্থিক খাতে একটি পাদটিকা হয়ে রয়েছে। এটাকে মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, শুধু আর্থিক অন্তর্ভূক্তি যথেষ্ঠ নয়, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘শূন্য আর্থিক বহির্ভূক্তি’ নিশ্চিত করা।
মূলধনের অভাবে গ্রামাঞ্চলের মানুষের ভেতরকার সহজাত উদ্যোক্তা শক্তি উন্মোচিত হতে পারে না। এতে তারা সহজেই মানব পাচার ও বঞ্চনার শিকার হয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদনে শোষণমুক্ত, উপযুক্ত ও নিরাপদ অর্থায়ন আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচার থেকে দরিদ্র মানুষকে অনেকটাই দুরে রাখতে পারে বলে সুপারিশ করা হয়।

প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, ‘আমাদেরকে এখনই কাজে নেমে পড়তে হবে। আর্থিক দিক থেকে এখনই জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সকল প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন ও শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। নিয়ন্ত্রক ও আইন প্রণেতাদেরকে সামাজিক ব্যবসা যে সকল নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে সেগুলোর দরজা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আর্থিক খাতের নেতৃবৃন্দকে শুধু আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচারের প্রান্তিক পর্যায়ের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করলে চলবে না, তাঁদেরকে আর্থিক বহির্ভূক্তিসহ এসকল সমস্যার মূল কারণগুলো দূর করতে তাঁদের ব্যবসায়ের মডেল গুলোও পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

উল্লেখ্য, আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচার অবসানের লক্ষ্যে আর্থিক খাতকে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গঠিত হয় কমিশনটি। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের ৮.৭ নং লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচারের অবসান করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ আধুনিক দাসত্ব ও মানব পাচারের শিকার হয়ে থাকে।
কমিশনের চেয়ারপার্সন ছিলেন জাতিসংঘ-সহায়তাপুষ্ট প্রিন্সিপল্স ফর রেস্পননিবল ইনভেস্টমেন্ট এর প্রধান নির্বাহী মিস ফিয়োনা রেনল্ড্স।

No comments

Powered by Blogger.