গুম, হত্যা আর মৃতদেহ উদ্ধারের একের পর এক ঘটনা ভীতিকর করে তুলেছে মেক্সিকোর যে শহরকে

মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরের সবুজে ছেয়ে থাকা শহরতলী লা এস্তান্সিয়া। সেখানে যে সমস্যা আছে তার ইঙ্গিত দেয় বাড়িগুলোর সামনে ঝোলানো 'বিক্রির জন্য' সাইনবোর্ডগুলো।
রাস্তার পাশেই একটি বাড়ি থেকে একটি গলিত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার পর গত মে মাস থেকেই মানুষজন এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে।
গত মাসেই একজন অপহৃত ব্যক্তি পালিয়ে এসে পুলিশকে যে ঠিকানা দিলো সেখানে গিয়ে পুলিশ পেলো একটি মৃতদেহ আর তিনটি বিচ্ছিন্ন মস্তক।
এ বছরেই সব মিলিযে পনেরটির বেশি খুন হয়েছে হালিস্কো রাজ্যের এই রাজধানী শহরে। এর বাইরে শহরটির গোরস্তানগুলোতে সৎকার করা হয়েছে আরো অনেক মৃতদেহ যেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন বাড়ি থেকে।

"আপনি ভয় অনুভব করতে পারবেন"

দেশটিতে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষের নিখোঁজ হবার রিপোর্ট হয়েছে পুলিশের কাছে। নিঃসন্দেহে এটা একটা ভীতিকর তথ্য।
অপরাধীরা ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে এসে মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখছে। এর ফলে ব্যক্তি সেসব সম্পত্তিতে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধারের পথে তৈরি হচ্ছে আইনি বাধা।
তল্লাশি দলকে অনেক ক্ষেত্রে কংক্রিট খুঁড়তে হচ্ছে মৃতদেহ বের করে আনার জন্য।
স্থানীয়দের কেউ কেউ চিৎকার শুনে বা মাংস পোড়ার গন্ধ পেয়ে পুলিশকে জানালেও খুব কম সংখ্যকই এটা করার সাহস পায়।
মাদক গ্যাং গুলো মৃতদেহ গুম করতে এসব জায়গা ব্যবহার করে
লা এস্তান্সিয়ার একজন অধিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, "আপনি ভীতিটা বুঝতে পারবেন। এটা অনুভব করা যায়।"
২০০৬ সাল থেকে মেক্সিকো সরকার যখন মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে সৈন্য মোতায়েন করলো এরপর বের হলো অনেকগুলো গণকবর।
এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০০৬ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অন্তত ১৯৭৮টি এরকম গোরস্তানের সন্ধান মিলেছে।

'মৃতের জন্য খনন'

পুরো মেক্সিকো জুড়ে নিখোজ স্বজনের দেহাবশেষ খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে নানা জায়গা খনন করে দেখছেন।
আর অনানুষ্ঠানিক এসব অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে আসছে আতঙ্কজনক খবর।
২০১৬ সালে পূর্বাঞ্চলীয় ভারাকুয রাজ্যে একটি জায়গায় পাওয়া যায় ২৯৮ টি মৃতদেহ ও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন কয়েক হাজার হাড়গোড়।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে একত্র করে এমন একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য গুয়াদালুপে আগুইলার নিজেও তার সন্তানের খোঁজ করছেন যিনি ২০১১ সাল থেকে নিখোঁজ আছেন।
"এখানে শহরের মধ্যে মৃতদেহ বহন করে নেয়াও ঝুঁকির কাজ। আবার কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে অনুসন্ধান করাও কঠিন কারণ এজন্য সার্চ ওয়ারেন্ট দরকার হয়"।

যুদ্ধের শহর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন গুয়াদালাজারায় যাদের মাটি চাপা দেয়া হয়েছে তার জন্য দায়ী দুটি গ্যাং।
আট বছর ধরে সন্তানকে খুঁজছেন এই মা
এর মধ্যে একটি হলো মেক্সিকো সরকারের বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অপরাধমূলক সংগঠন 'হালিস্কো নিউ জেনারেমন কার্টেল'।
আরেকটি হলো 'নুয়েভা প্লাজা'।
মূলত সিজেএনজি ভেঙ্গেই নুয়েভার জন্ম হয়েছিলো ২০১৭ সালে।
ওই কর্মকর্তা বলেন এসব গ্যাং ভূস্বামীদের কাছ থেকে জমিভাড়া নেয় আর তখন বিবেচনাও করা হয়না যে ওই জায়গা কি কাজে ব্যবহার করা হবে।
"তারা পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত সম্পত্তি নিয়ে সেখানে নির্যাতন কেন্দ্র বা গোরস্তান বানায়"।
পুলিশ কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন অন্য রাজ্যগুলোতেও অপরাধীদের এধরণের কাজের বিস্তার হতে পারে।

কেউ দেখছেনা

২০১৮ সালে হালিস্কো রাজ্য সরকার ও ফেডারেল সরকার দুটোতেই পরিবর্তন এসেছে।
হালিস্কোর ফরেনসিক প্রধান অক্টাভিও কোটেরো বলছে নতুন নেতৃত্বও গুম সংকটের দিকে যথার্থ দৃষ্টি দিচ্ছেনা।
তার মতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধারের ঘটনায় এমন পর্যায়ে গেছে যে এগুলো চিহ্নিত করার সক্ষমতা আর নেই।
মি. কোটেরোর কন্যাকেও গত জুলাই থেকে পাওয়া যাচ্ছেনা।
এখনো জানা যায়নি সে আসলে কোথায়।
মি. কোটেরো বলছেন, "আসলে এদিকে আরও দৃষ্টিই নেই"।
কোনো বাড়িতে মৃতদেহ পেলে এভাবে বন্ধ করে দেয় পুলিশ

No comments

Powered by Blogger.