ট্রেনে বালতি-আসন, ভাড়া ১৮০-২০০ টাকা! by আতাউর রহমান জুয়েল

‘ট্রেনে টিকিট কাইটেও বসার সিট (আসন) পাওয়া যায় না। টিকিট কাইটে লাভ কী! এর চাইতে ২০০ টাকায় ট্রেনের কর্মচারীদের কাছ থেকে বালতি ভাড়া নিয়ে তাতে বসে আরামসে যাওয়া যায়।’
কথাগুলো ট্রেনযাত্রী কফিল উদ্দিনের; যিনি ২৬ জুন বুধবার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ বগিতে বালতি বসে ঢাকা ফিরছিলেন।
কফিল জানান, দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে তিস্তা এক্সপ্রেসে উঠে ‘ছ’ বগির অ্যাটেনডেন্ট আবুল কালাম ওরফে কালাম মেম্বরের কাছ থেকে ২০০ টাকায় বালতি ভাড়া নিয়েছেন। তিনি ঢাকার একটি হোটেলে কাজ করেন। তার গ্রামের বাড়ি দেওয়ানগঞ্জের চিকাজানিতে। ছুটিতে বাড়িতে আসলে তিনি প্রতিবারই প্লাস্টিকের চেয়ার, মোড়া বা বালতি ভাড়া নিয়ে তাতে বসে ঢাকায় ফেরেন।
সিটের পাশে বালতিতে বসে আছেন এক যাত্রী (ছবিঃ–বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি)
কফিল আরও জানান,ট্রেনে সিট না পেয়ে বালতি ভাড়া নিয়ে অনেক যাত্রীই যাতায়াত করেন। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার আগে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয় এবং এই সুযোগে বালতি-যাত্রীরা সেখানে নেমে যান।
এর আগে ট্রেনে প্লাস্টিকের চেয়ার, মোড়া বা টুল বাণিজ্যের কথা শোনা গেলেও এবারই প্রথম বালতি ভাড়া দেওয়ার কথা জানা গেলো। কফিলের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়ে তিস্তা এক্সপ্রেস ঘুরে দেখা গেলো, এ ট্রেনের খাবার বগিসহ অন্য বগিগুলোতে প্লাস্টিকের চেয়ার, মোড়া ও টুলে বসার পাশাপাশি অনেক নারী ও পুরুষ যাত্রী বালতিতেও বসে যাচ্ছেন।
‘চ’ বগিতে বালতিতে বসা যাত্রী কমলা বেগম জানান, ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে জামালপুর রেলস্টেশন থেকে এ ট্রেনে ওঠেছেন। সিট না পেয়ে ১৮০ টাকায় বালতি ভাড়া নিয়েছেন।
বালতিতে বসা আরেক যাত্রী বাবু আহমেদ জানান, শুধু তিস্তা নয়, আন্তঃনগর সব ট্রেনেই বালতি ভাড়া দেওয়া হয়। তার অভিযোগ, বালতি ভাড়া থেকে আসা টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট থেকে শুরু করে টিকিট চেকার (টিটি),গার্ড,পরিচালক এবং পুলিশ সদস্যরা।
ট্রেনের ‘ছ’ বগির ৫২ নম্বর সিটের যাত্রী কামরুল ইসলাম বলেন,‘বালতিতে বসিয়ে যাত্রী নেওয়ার কারণে ট্রেনে হাঁটাচলায় সমস্যা হয়ে থাকে। সিটের যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে বালতি ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।’
প্ল্যাস্টিকের চেয়ার ও টুলে বসে আছেন যাত্রীরা (ছবি–বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি)
যাত্রীদের কাছে বালতি ভাড়া দেওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন অ্যাটেনডেন্ট আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘বেতনের টাকায় সংসার চলে না। কী করবো, বালতি ভাড়া দিয়ে চলতে হচ্ছে। যাত্রীরা যা দেয়, তাই নিয়ে থাকি।’
খাবারের বগির কর্মচারী সুলতান মিয়া বলেন, ‘এ বগিতে প্লাস্টিকের চেয়ার,মোড়া,টুল ও অর্ধশত বালতি রয়েছে, যা ভাড়া দেওয়া হয়। ট্রেনের প্রতি বগিতে ১০-১২টি করে বালতি বসিয়ে দেওয়া হয়।’ তিনিও জানান, প্লাস্টিকের চেয়ার, মোড়া, টুল ও বালতি ভাড়া থেকে যে টাকা আসে, তা খাবার বগির ঠিকাদার, টিটি, পরিচালক, গার্ড, অ্যাটেনডেন্টসহ পুলিশের সদস্যরা ভাগ করে নেন। শুধু তিস্তা ট্রেনই নয়, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের সব আন্তঃনগর ট্রেনেই বালতি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক জহুরুল ইসলাম জানান,ট্রেনে বালতি ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বালতিসহ অন্য বসার জিনিস ভাড়া দেওয়া বন্ধে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’
উল্লেখ্য, প্রতিদিন ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
টুলে বসে আছেন যাত্রীরা (ছবি–বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি)

No comments

Powered by Blogger.