তালেবানের শর্তেই চলতি মাসে সর্ব-আফগান শান্তি সম্মেলন

আগামী ৭-৮ জুলাই কাতারে পরিকল্পিত সর্ব-আফগান শান্তি সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া আকস্মিক ঘোষণার ফলে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সীমা এগিয়ে আসতে পারে বলে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। তালেবানের শর্তেই এই সম্মেলন হচ্ছে। ফলে এতে আফগান সরকারের কোনো প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন না।
সোমবার রাতে ফক্স নিউজ চ্যানেলের টাকার কার্লসন টুনাইটে ট্রাম্প বলেন, প্রায় অর্ধেক আমেরিকান সৈন্য ইতোমধ্যেই সরে এসেছে।
কাতারে তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনায় নিয়োজিত ওয়াশিংটনের বিশেষ দূত জালমি খালিলজাদের প্রয়াসের অংশ হিসেবে প্রত্যাহার হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এপির হাতে আসা সাক্ষাতকারের কপি অনুযায়ী ট্রাম্প বলেন, আমি সৈন্য প্রত্যাহার চাই। আমি অনেক সৈন্য প্রত্যাহারও করেছি। আমাদের সৈন্য ছিল ১৬ হাজার। আমরা প্রায় ৯ হাজার ফেরত নিয়েছি। তবে এটি অনেকে জানে না। অর্থাৎ আমরা আফগানিস্তানে সৈন্য বেশ হ্রাস করেছি। এ নিয়ে আমি বেশি কথা বলতে চাই না।
তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের এক সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, আফগানিস্তানে এখনো প্রায় ১৪ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়ে গেছে। এই সংখ্যক সৈন্য কয়েক মাস ধরেই সেখানে আছে।
দোহায় তালেবান মুখপাত্র সোহাইল শাহিন বলেন, খালিলজাদের সাথে আলোচনায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচি নিয়েই মূলত কথা হচ্ছে।
সোমবার এক টুইটবার্তায় শাহিন বলেন, আলোচনায় আমেরিকান বাহিনীসহ আফগানিস্তানে থাকা প্রায় ২০ হাজার সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সূচি নির্ধারিত হবে।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। ২৫ জুন কাবুল সফরকালে পম্পেইও ঘোষণা করেন, সৈন্য প্রত্যাহারের কোনো সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার ট্রাম্প আরো বলেন, তিনি আফগানিস্তানে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক রেখে যাচ্ছেন।
এদিকে আসন্ন সর্ব-আফগান সংলাপ প্রশ্নে জার্মানির বিশেষ প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রদূত মারকাস পোটজেল মঙ্গলবার বলেন, এতে অংশগ্রহণকারী সবাই ব্যক্তিগত সামর্থ্যে যোগ দেবেন, সবার অবস্থান থাকবে সমান।
তালেবান স্পষ্টভাবে বলে আসছে, তারা প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকারের সাথে কথা বলবে না। তারা এ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রর তাবেদার মনে করে। তারা জোর দিয়ে বলছে, তারা যে কারো সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে তাদের আসতে হবে সাধারণ আফগান নাগরিক হিসেবে।
তালেবান পক্ষ ইতোমধ্যেই সুপরিচিত আফগানদের সাথে দুবার বৈঠক করেছে। এমনকি তারা আফগান সরকারের শান্তি পরিষদের সদস্যদের সাথেও কথা বলেছে। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সাথেও আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
সর্ব-আফগান আলোচনার খবর প্রকাশিত হওয়ার এক দিন আগে আফগান রাজধানী কাবুলে একটি বিপর্যয়কর হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে তালেবান। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়।
আগামী সপ্তাহের এই আলোচনার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি ইতোপূর্বে কয়েকবারই তালেবানের সাথে সরাসরি আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন।
এদিকে কাতারে আলোচনার কো-স্পন্সর হবে জার্মানি। কাতারে এর আগেও সর্ব-আফগান আলোচনার কথা হয়েছিল। কিন্তু তখন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে মতানৈক্য না হওয়ায় ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল।
জার্মান রাষ্ট্রদূত পোটজেল বলেন, শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে আফগানিস্তান। কেবল আফগানরাই তাদের দেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে অব্যাহত যুদ্ধে সাধারণ আফগানরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার সোয়াব গুল নামে এক ক্রুদ্ধ আফগান বলেন, আফগানিস্তানে কখনোই শান্তি আসবে না। উল্লেখ্য, মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে কাবুলে তার বিছানা বিক্রির দোকানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
৪০ বছর বয়স্ক গুল তার দেশে কখনো শান্তি দেখেননি এবং ভবিষ্যতেও শান্তি হবে বলে তিনি মনে করেন না।
তিনি বলেন, প্রতিটি দিন লোকজন মারা যাচ্ছে। আফগানিস্তান হয়ে পড়েছে আমাদের মতো আফগানদের জন্য দোজখ। আমার মনে হচ্ছে, আমি কখনো শান্তির দেখা পাবো না। 
>>>ক্যাথি গ্যানন ও আমির শাহ
২৮ মে ২০১৯, মস্কো আলোচনায় অংশ নেয়া আফগান প্রতিনিধি দল

No comments

Powered by Blogger.