চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিপুল সম্ভবনা ও সুযোগের কথাও বলেন তিনি।
চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য। চীনা ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানাই বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভবনাকে আপনারা কাজে লাগান।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চীনা কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিআইটি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক  গোলটেবিল আলোচনায় দেশটির শীর্ষ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের ‘রপ্তানি বাস্কেট’ খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, চাইনিজ ব্যবসায়ীরাও আগামী দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করবে।
‘বিনিয়োগ বাড়ানোর বহু ক্ষেত্র রয়েছে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, চামড়ার মতো বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর এবং মধ্যম ও ভারী শিল্প সেক্টর, অ্যাগ্রো-প্রসেসিং, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। যদিও এ বাণিজ্যের বেশির ভাগ চীন থেকে আমদানি করা হয়।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ চীনের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। এবং ভূ-কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকেও চীনের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ শুধুমাত্র সরাসরি ১৬২ মিলিয়ন মানুষের বাজারই নয়, আরো ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজারের প্রবেশের সুযোগ।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় মার্কেটে ডিউটি ও কোটা ফ্রি পণ্য প্রবেশের সুবিধা রয়েছে।
মূলধনসহ ফেরত যাওয়া, ট্যাক্স হলিডে, ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগে স্থায়ী আবাসনের অনুমতি এবং ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, নগদ ছাড়সহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির দিক দিয়ে চীনের পরই বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান। চীন এখাতেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প জাহাজ নির্মাণ শিল্পে রূপ নিয়েছে। এখন বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশে ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজ রপ্তানি করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মিঠাপানির মাছ উৎপাদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহৎ দেশ। আর ধান উৎপাদনের দিক দিয়ে চতুর্থ। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৩৬.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি করেছে । পরিকল্পনা রয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটা ৭২ বিলিয়নে উন্নীত করার।
‘দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে আমাদের সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশের ৬৪টি জেলাযর প্রত্যেকটিতে অন্তত একটি করে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে এবং এজন্যই চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশটিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। অধিকন্তু বিডা ও বেজার মতো বাংলাদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণকারী সংস্থাগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ এর প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। বাংলাদেশের নির্মাণ, গতানুগতিক ও বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো উন্নয়নের মতো অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পই চীনা কোম্পানিগুলো বাস্তবায়ন করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে এখন ‘অভূতপূর্ব’ উন্নয়নের দেশ হিসেবে মনে করা হচ্ছে এবং দেশটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ টানা চার বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রেখেছ।এ বছর আমরা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করেছি। এটা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হার। অব্যহত উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের সামাজিক খাতগুলোতে এই উল্লেখযোগ্য অর্জনের প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের (এমডিজি) অধিকাংশই অর্জন করেছি এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ সুগম করে ফেলেছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ পরিণত হতে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ওই বছর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।
‘২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়া আমাদের লক্ষ্য,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
চীনা ব্যবসায়ীরা তাদের বক্তব্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ব্যাপক প্রশংসা করেন।
প্রকৌশল, নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহও প্রকাশ করেন তারা।
জানা যায়, বাংলাদেশে ৪০০ এর মতো চীনা কম্পানি কাজ করে। এর মধ্যে এই অনুষ্ঠানে ২৬টির মতো কম্পানি অংশ নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.