লালবাগে খাদেম হত্যার নেপথ্যে by আল-আমিন

লালবাগের আজিমপুরে মসজিদের ভেতরে খাদেম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক লেনদেন ও ব্যক্তিগত রেষারেষি। পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানেও বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। মূলত এই দুই ক্লু সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেছে তারা। এ ঘটনার মূল হোতা সন্দেহভাজন সাইফুলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তার গ্রামের বাড়িসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ঘটনার অন্যসব কারণ এবং তার সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কী-না তা জানা যাবে। এ ঘটনায় আটক ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। গত বুধবার রাত ১২ টার দিকে আজিমপুর কবরস্থান সংলগ্ন মেয়র হানিফ জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে বস্তাবন্দি অবস্থায় খাদেম মো. হানিফের (৪৫) লাশ দেখতে পান ওই মসজিদের আরেক খাদেম।
খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে মিডফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মসজিদের অন্য ৩ জন খাদেমকে আটক করে পুলিশ। সূত্র জানায়, নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের চিকিৎসক সুরতহাল প্রতিবেদনে লিখেছেন, তার মাথাসহ বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বাম পায়ের রগ কাটা ছিল। অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর-৩।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লালবাগ থানার ওসি (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, পলাতক মসজিদের খাদেম সাইফুলের সঙ্গে নিহত হানিফের টাকা লেনদেন এবং ব্যক্তিগত রেশারেশি ছিল। সেই সূত্র ধরে হানিফ খুন হয়ে থাকতে পারেন। যারা পুলিশের হেফাজতে আটক আছে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। সন্দেহভাজন সাইফুল গ্রেপ্তার হলে আর কে এ খুনের ঘটনায় জড়িত এবং কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে জানা যাবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লালবাগ থানার এক এসআই মানবজমিনকে জানান, প্রায় ৭ বছর ধরে নিহত মসজিদের খাদেম হানিফ এবং পলাতক সাইফুল মসজিদের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করে আসছিলেন। মসজিদের মোট ৪ জন খাদেম এক রুমেই ঘুমাতেন। ৫ মাস আগে মসজিদের মুসুল্লীদের দেয়া ছোট দান বাক্সের টাকার হিসাব নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এছাড়াও কিছুদিন আগে তদের মধ্যে হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একটি নালিশী বিচারে সাইফুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তখন থেকে তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত রেশারেশি ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত আরও তিনজন খাদেম দাবি করেছে যে, ওই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিষয়ে তারা কিছু জানে না। বুধবার এশার নামাজের পর পলাতক সাইফুল আর রুমে ঘুমাতে যায়নি। মসজিদের দ্বিতীয় তলায় পরিত্যক্ত রুমে হানিফকে সে হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে এশার নামাজের পর থেকে রাত ১২ টার মধ্যে। কারণ তারা হানিফকে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে দেখেছেন। এশার নামাজের পর দুইজন রুমে ঘুমাতে যান। কিন্তু, বাকি দুইজন ঘুমাতে যাননি। অপর দুইজন তাদের খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তার মধ্যে একজন খাদেম মসজিদের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে বস্তাবন্দি হানিফের মরদেহ দেখতে পেলে পুলিশকে খবর দেন।
সূত্র জানায়, নিহত হানিফের শার্ট ছেঁড়া পেয়েছিল পুলিশ। পুলিশের ধারণা, খুনের আগে ওই কক্ষে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটবে মসজিদের অন্য খাদেমেরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। পুলিশ ইতিমধ্যে হানিফের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পেয়েছে। তাকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পর হানিফের লাশ পুলিশ তার পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করেছে। নিহতকে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া এলাকায় দাফন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.