বাড়ছে খুন-ধর্ষণ-পৈশাচিকতা : দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা

বাংলাদেশে বাড়ছে খুন-ধর্ষণের ঘটনা। বাদ পড়ছে না শিশু থেকে বয়স্ক মানুষও। এসব ঘটনায় অপরাধীদের পৈশাচিকতা ও নির্মমতাও হার মানিয়েছে অতীতকে। যথা সময়ে বিচার না হওয়া, প্রকৃত অপরাধীর পার পেয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের প্রভাবশালী মহলের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়েছে অপরাধ। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণ করে, এমন মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি বরগুনার রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নাড়া দিয়েছে দেশকে। স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নী বাধা দিয়েও বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই, এমন পৈশাচিক ঘটনায় স্তম্ভিত সাধারণ মানুষ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা রুপা, কুমিল্লার সোগাহী জাহান তনু, নার্স তানজিনা ও তানিয়াকে হত্যার মতো ঘটনাগুলো নৃশংসতা ও নির্মমতার চরম নজির সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেন, যখন কোন শিশু এই ধারণা নিয়ে বড় হয় যে, আশপাশের পরিবেশ তার প্রতিকূলে, মানুষে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ায় জীবনের মূললক্ষ্য, তখন সে এ আগ্রাসী আচরণ করে। আবার যখন বিচারহীনতা দেখে; অপরাধ করার পর, দীর্ঘ সময়েও বিচার বা শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে না দেখে কিংবা পেছন থেকে রক্ষা করবে এমন শক্তির সঙ্গে সংখ্যতা থাকলে, অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। এজন্য ছোটবেলা থেকেই নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া যেমন জরুরি, তেমনি অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
রিফাত শরীফ হত্যার মূলনায়ক নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে হত্যার সমালোচনাও চলছে দেশজুড়ে। অনেকেই বলছেন, তাকে হত্যার মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকদের আড়াল করা হয়েছে। তাই অপরাধীকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা নয়, বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া প্রয়োজন।
এদিকে, সরকার বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না, আত্মরক্ষার্থেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালায় বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা আমরাও পছন্দ করি না, কিন্তু সবারই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। নয়নের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
এদিকে, বেড়েই চলছে শিশুদের ওপর সহিংসতা আর নির্যাতন। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত, শিশুদের ওপর মোট ২১৫৮টি সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে ৯৮৮ শিশু অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে। খুন হয়েছে ২০৫ শিশু। ধর্ষণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ। ছয় মাসে ৪৯৬ শিশু ধর্ষিত ও ৭২৬ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদ পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিশু অধিকার ফোরাম।

No comments

Powered by Blogger.