সহজ পাটিগণিত, কুমারস্বামী সরকার সংখ্যালঘু, সুপ্রিম কোর্টে বললেন বিদ্রোহী বিধায়করা

বিধায়করা ইস্তফা দিয়েছেন, কিন্তু স্পিকার গ্রহণ করেননি। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে কর্নাটকের রাজনৈতিক তথা সাংবিধানিক সঙ্কট। সেখানেও সহজে জট কাটার ইঙ্গিত মিলছে না। মঙ্গলবার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া বিধায়কদের মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বিধায়কদের ইস্তফা গৃহীত হবে কি না, তা আদালত স্পিকারকে বলে দিতে পারে না। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও জানায়নি আদালত। অন্য দিকে সুপ্রিম কোর্টে ‘বিদ্রোহী’ বিধায়কদের পক্ষে আইনজীবী মুকুল রোহতগী বলেন, বিধায়করা যদি বিধানসভায় না যেতে চান, তাহলে স্পিকার তাঁদের জোর করতে পারেন না। রোহতগীর আরও বক্তব্য, এই সরকার সংখ্যালঘু। এটাই  সহজ পাটিগণিতের মতো স্পষ্ট।

কংগ্রেস-জেডিএস জোট সরকার টিকে যাবে, না কি বিজেপি ফের সরকার গঠন করবে— গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে চূড়ান্ত নাটকীয় অবস্থা কর্নাটকে। দল এবং কুমারস্বামী সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইস্তফা দিয়েছেন একের পর এক কংগ্রেস এবং জেডিএস বিধায়ক। দু’দলের মিলিত পদত্যাগী বিধায়কের সংখ্যা ১৬। এছাড়া আরও দুই নির্দল বিধায়কও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন (তাঁরাও কুমারস্বামী সরকারকে সমর্থন করেছিলেন) স্পিকার কে আর রমেশ কুমারের কাছে। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া সব বিধায়কই এখন মুম্বইয়ের একটি হোটেলে রয়েছেন।

কিন্তু স্পিকার কারও ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেননি। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার পরেও না। গত বুধবার রাতের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল স্পিকারকে। কিন্তু তিনি তা না নিয়ে জানিয়েছিলেন, বিধায়করা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন, নাকি এর পিছনে কোনও চাপ রয়েছে, তা যাচাই করে দেখার জন্য কিছু দিন সময় চান। তা ছাড়া অনেক বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্পিকার। এর পর বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, মঙ্গলবারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। যদিও স্পিকার এখনও পর্যন্ত বিধায়কদের পদত্যাগ গ্রহণ করেননি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ভঙ্গ করা বা না মানার ক্ষমতা স্পিকারের আছে কিনা, তা নিয়েও ওই সময় প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা।

আর কর্নাটকের বর্তমান রাজনৈতিক ছবিটা কী? ২০১৮ সালে ২২৫ (এক জন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত) আসনের কর্নাটক বিধানসভায় কোনও স্পষ্ট রায় দেয়নি জনতা। ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি থেকে কংগ্রেস এবং জেডিএস জোট করে সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তথা জেডিএস সুপ্রিমো এইচ ডি দেবগৌড়ার ছেলে কুমারস্বামী। দু’দলের মিলিত বিধায়ক সংখ্যা ছিল ১১৮, ম্যাজিক ফিগারের (১১৩) থেকে মাত্র ৫ জন বেশি। কিন্তু ১৮ জনের পদত্যাগ গৃহীত হলে সরকার পক্ষের বিধায়ক সংখ্যা নেমে যাবে ১০০-তে। ম্যাজিক ফিগারও ১১৩ থেকে কমে দাঁড়াবে ১০৫।

বিরোধী শিবিরে বিজেপির হাতে ঠিক ১০৫ জন বিধায়কই রয়েছেন। তার সঙ্গে আবার দু’জন নির্দলও বিজেপিকে সমর্থন করেছে। ফলে তাঁদের ঝুলিতে সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যা রয়েছে। এর মধ্যে আবার সরকার টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজেই আস্থা ভোট চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী। বৃহস্পতিবারই সেই ভোটাভুটি হওয়ার কথা। তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারলে কংগ্রেস-জেডিএস সরকার পড়ে যাবে কর্নাটকে। পদত্যাগী বিধায়কদের ইস্তফা গৃহীত হলে তখন বিজেপির সামনে খুলে যেতে পারে সরকার গঠনের রাস্তা।

এর মধ্যে আবার মঙ্গলবার গভীর রাতে বেঙ্গালুরু ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কংগ্রেস বিধায়ক রোশন বেগকে গ্রেফতার করেছে কর্নাটক পুলিশের সিটবা বিশেষ তদন্তকারী দল। আইএমএ পঞ্জি স্কিম বা চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে এই এআইটি গঠন হয়েছিল। সেই মামলায় নাম জড়ায় রোশনের। ১৯ জুলাই তাঁকে হাজিরার নোটিস ধরিয়েছিল সিট। তদন্তকারীদের অভিযোগ, ওই হাজিরার আগেই পালিয়ে যাওয়ার মতলবে ছিলেন রোশন। একটি বিশেষ চার্টার্ড বিমানে বেঙ্গালুরু ছাড়ার কথা ছিল তাঁর। গ্রেফতারের পর তিনি তাঁর গন্তব্যস্থলের নাম হিসেবে দিল্লি এবং পুণে দু’টি নাম বলেছেন। ওই চার্টার্ড বিমান সূত্রে অবশ্য খবর, পুণের উদ্দেশেই উড়ে যাওয়ার কথা ছিল বিমানটির। তার আগেই গ্রেফতার করা হয় রোশনকে। কংগ্রেস-জেডিএস জোট যদিও বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, বিরোধী দলনেতা তথা কর্নাটকের বিজেপি সভাপতি বি এস ইয়েদুরাপ্পার আপ্ত সহায়ক সন্তোষের সঙ্গে মুম্বই যাচ্ছিলেন। কিন্তু সন্তোষ কোনওক্রমে পালিয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগই তুলেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী।

বিধায়কদের ইস্তফায় সাংবিধানিক সঙ্কট এবং তার জেরে প্রতি মুহূর্তে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছে। বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক চিত্র। কখনও বিজেপির পাল্লা ভারী, তো পরের মুহূর্তেই কংগ্রেস-জেডিএস সরকারের সঙ্কট কাটার ইঙ্গিত মিলেছে। বাইরে যখন এই ছবি, পর্দার পিছনেও চলছে রাজনৈতিক তৎপরতা। ময়দানে নেমেছেন কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ ডি কে শিবকুমার। বিরোধী শিবিরেও ঘুঁটি সাজাচ্ছেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ ইয়েদুরাপ্পাও। দু’জনের এই রাজনৈতিক মস্তিষ্কের ক্ষুরধার লড়াই যে আগামী আরও কয়েক দিন চলবে, তা বলাই যায়।

No comments

Powered by Blogger.