পর্দার আড়ালে কূটনীতিতে কি পাক-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

পাকিস্তান ও ভারত তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন চ্যানেলে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। গত রোববার দুই দেশের প্রতিনিধিদের ইসলামাবাদে বৈঠক করার কথা ছিলো। দেশগুলোর প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূতরা রয়েছেন।
এই ট্রাক-টু কূটনীতি পুনরুজ্জীবিত করার প্রথম পর্যায়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে দুই দিনব্যাপী আলোচনা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে একই ধরনের আলোচনার আয়োজন করা হবে।
গত ফেব্রুয়ারিতে অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার জের ধরে প্রতিবেশী দেশ দুটি যুদ্ধের কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলো। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তৎক্ষণাৎ পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো প্রমাণ দিতে বলে।
২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ওই দাবি টেকেনি। সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা ওই এলাকা সফর করে কোন সন্ত্রাসী শিবির দেখতে পাননি। কিন্তু পরদিন পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে ভারতের একটি জঙ্গিবিমান ঘায়েল ও একজন পাইলটকে আটক করে। পরে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে অভিনন্দন বর্তমান নামের ওই পাইলকে মুক্তি দেয়া হয়।
এখন পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা বলছেন যে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এই চেষ্টা সফল হবে না কারণ তিনি একজন কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী এবং পাকিস্তান বিরোধী। এই বিরোধিতাই তাকে সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয় এনে দিয়েছে।
ইমরান খান ও ভারত
গত বছর ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মির থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত সব ইস্যু নিস্পত্তির জন্য আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবেও মোদি ও ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার সব প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ক্ষুদ্র মানুষ বড় অফিস দখল করে বসেছে, যার বড় কোন দৃশ্য দেখার ভিশন নেই।
৯২ নিউজ-এ ‘হার্ড টক পাকিস্তান’ শীর্ষক টক-শোতে ড. মুইদ পীরজাদা বলেন, কৌশলগত স্বার্থেই পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত আলোচনায় বসবে না। আমি ৮-১০ বছর ধরেই বলে আসছি যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নয় এই অঞ্চলে তাদের জটিল কৌশরগত স্বার্থের করণে।
পাশাপাশি ভারত আন্তর্জাতিক মহলকে বুঝাচ্ছে যে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সংলাপে ইচ্ছুক হলেও পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরে যে সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে তা আন্তর্জাতিক রীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
পীরজাদার সঙ্গে একমত হয়ে শামসাদ আহমেদ খান বলেন, ভারত ৯/১১ থেকেই এই নীতি অনুসরণ করে আসছে। তিনি বলেন বেশ কিছু অভ্যন্তরিণ ও আঞ্চলিক জটিলতার করণে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসা ভারতীয় স্বার্থের অনুকূলে নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে মোদি তার প্রথম নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, অর্থনীতি চাঙ্গা করার ও দারিদ্র দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। তার মুসলিম ও পাকিস্তান বিরোধী বয়ান স্পষ্ট হলেও তা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব বিস্তার করেনি।
কিন্তু প্রথম নির্বাচনে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ মোদি সাম্প্রতিক নির্বাচনকে পুরোপুরি পাকিস্তান বিরোধী গলাবাজীতে রূপ দেন, যা তার জন্য ফল বয়ে এনেছে। আর সে কারণেই মোদি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী খানকে আমন্ত্রণ জানাননি, যা তার পাকিস্তান বিরোধী অবস্থানের প্রমাণ।

No comments

Powered by Blogger.