পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর by আদিলা নওরিন

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ২১ থেকে ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান। দোহা আলোচনার ঠিক পরপরই এই সফরে যাচ্ছেন তিনি, যেখানে আফগান শান্তি আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুই দেশই তাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার জন্য অভিন্ন ভিত্তি নির্ধারণের চেষ্টা করছে।

পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোনদিকে অগ্রসর হতে পারে, সেটি আলোচনার আগে, আঞ্চলিক পরিস্থিতির দিকে নজর দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান এখনও জঙ্গিবাদ আক্রান্ত এবং ক্ষমতার খেলা চলছে সেখানে। বিভিন্ন পক্ষ ষেখানে কৌশলগত, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্র দখলের চেষ্টা করছে। আফগানিস্তান নিয়ে ট্রাম্পের নীতি ২০২০ সালের আগেই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এমন একটা সমাধান বের করতে হবে যেটা আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করবে এবং আমেরিকা ও পশ্চিমের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান যাতে আবারও ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

উপসাগরীয় অঞ্চলে অনিশ্চয়তার মেঘ বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় দেশটির অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে এবং যে কোন ধরনের ভুল পদক্ষেপের ফলে এখানে বড় ধরনের সঙ্ঘাত সৃষ্টি হতে পারে। সম্প্রতি একটি ট্যাঙ্কারের উপর হামলা এবং আমেরিকার একটি উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে, উপসাগরীয় অঞ্চল এখন বারুদের স্তুপের উপর বসে আছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন ওয়াশিংটনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন, তখন অনেক বিষয় মাথায় থাকবে তার। এবং পাকিস্তানকে এখানে বহু চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ সুবিধার মাঝখান দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ইতিহাসের মধ্যে না গিয়েও এটা বলা যায় যে, দুই দেশের সম্পর্কের কিছু সুসময় ও দুঃসময় ছিল। কিন্তু সম্পর্কটা কখনও লাল রেখা অতিক্রম করেনি এবং বেশির ভাগ সময়ই সেটা ইতিবাচক জায়গাতেই ছিল। পাকিস্তান – যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কটি প্রথাগত কূটনৈতিক, বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্কের চেয়েও বড় এবং এখানে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের একটা মাত্রা রয়েছে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া উচিত যেহেতু দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা রয়েছে ও আর্থিক নীতি একটা আকার পেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর ও তাদের ব্যুরো অব সাউথ ও সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স তাদের পোর্টালে পাকিস্তান সম্পর্কিত তথ্য আপডেট করেছে, যেখানে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেয়া হয়েছে।

ইমরান খানের আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত এবং অভিন্ন স্বার্থের উপর ভিত্তি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে আশ্বাস দেয়া উচিত যে, পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নিজ গুরুত্বের কারণেই অব্যাহত থাকবে এবং উভয়ের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্বেও সেটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। পাকিস্তান এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করবে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে: উভয়েই জনপ্রিয় এবং তাদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সচেতন কিন্তু দুজনেই গতানুগতিক পন্থা এড়িয়ে কাজ করেন; এবং তাদের রসায়ন পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য বহু কিছু নিয়ে আসতে পারে। ইমরান খানের এটা জানা থাকা উচিত যে, যারা পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যে ভাঙন ধরাতে চায়, তারা তাদের মতো করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে যাতে এই সম্পর্কের পরিবেশটাকে কলুষিত ও বিতর্কিত করা যায়। তাই প্রতিটি পদক্ষেপের আগেই যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.