বাইডেনকে নিয়ে নতুন হিসাব

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে ২৪ জন নেতা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে জনমত জরিপে এগিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মধ্যপন্থী। জরিপ বলছে, ট্রাম্পকে পরাজিত করতে তিনি সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। তবে গত সপ্তাহে ডেমোক্রেটিক পার্টির ২০ জন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনেকে নতুন করে অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন।
সবাই বলছেন, বিতর্কে জয়ী হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কমলা হ্যারিস। ভারতীয় মা ও কৃষ্ণকায় বাবার সন্তান কমলা নিজেকে একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে পরিচয় দেন। গত বৃহস্পতিবার এনবিসি টিভি প্রযোজিত বিতর্কে তিনি বর্ণবাদ প্রশ্নে জো বাইডেনের অতীত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই ইস্যুতে তিনি একদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্টকে নাকাল করেছেন, অন্যদিকে নিজেকে আলোচনার মধ্যমঞ্চে নিয়ে এসেছেন।
সিনেটর কমলা হ্যারিসের অভিযোগ, সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলব্যবস্থায় বর্ণবিভাজন ঘোচাতে কৃষ্ণকায় ছেলেমেয়েদের বাসে করে আনা-নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাইডেন এর বিরোধিতা করেছিলেন। বাইডেন সে সময় বলেন,‘আপনি বর্ণবাদী, আমি সে কথা বিশ্বাস করি না। কিন্তু আপনি ভুল করেছিলেন, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।’ বাইডেনকে লক্ষ্য করে কমলা হ্যারিসের এই আক্রমণ এখন সবার মুখে মুখে। বর্ণবাদী হিসেবে পরিচিত দুজন রিপাবলিকান সিনেটের প্রতি তিনি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন, বাইডেনের সে বক্তব্যও সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিতর্কের সময় কমলা হ্যারিসের তির্যক মন্তব্যের জবাব দিতে পারেননি বাইডেন। পরে তথ্যবিবরণী দিয়ে বাইডেনকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছে। তবে দলের বেশির ভাগ সমর্থক সেই ব্যাখ্যা যথাযথ মনে করেননি। বিতর্কের পর জাতীয় জরিপে বাইডেন ৩১ পয়েন্ট পেয়ে এখনো প্রথম স্থানে, দ্বিতীয় স্থানে ১৯ পয়েন্ট পেয়ে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। ১২ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন কমলা হ্যারিস। বিতর্কের আগে বাইডেনের পয়েন্ট ছিল ৩৮, আর কমলার ৬। অর্থাৎ, এই বিতর্কের পর বাইডেন হারিয়েছেন ৫ পয়েন্ট, কমলা হ্যারিসের সংগ্রহ অতিরিক্ত ৬ পয়েন্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেন দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে এত দিন যে নিশ্চিত ধারণা ছিল, তা এখন আর মোটেই নিশ্চিত নয়। এ কথা ঠিক, ‘ভোটার গ্রুপ’ হিসেবে আফ্রিকান-আমেরিকানরা এখনো তাঁকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। কিন্তু দলের প্রগতিশীল অংশ বাইডেনের ব্যাপারে দ্রুত উৎসাহ হারাচ্ছে। বার্নি স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ফয়েজ শাকির এই নতুন মূল্যায়নের সারসংক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, জো বাইডেন যেখানে কমলা হ্যারিসের সমালোচনার জবাব দিতে পারেননি, সেখানে ট্রাম্পের আক্রমণ কীভাবে ঠেকাবেন, সেটা চিন্তার বিষয়।
বাইডেনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মধ্যপন্থী থিংক ট্যাংক থার্ডওয়ের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাট বেনেট আরও সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘নাহ, মোটেই ভালো ফল দেখাতে পারেননি বাইডেন।’ তিনি আশা করেছেন, বাইডেন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে তাঁকে সে জন্য যথেষ্ট খাটতে হবে।
মনোনয়নপ্রার্থী অনেকেই এখন বাইডেনের সমালোচনায় মুখর। ৭৬ বছর বয়সী বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অতি বৃদ্ধ ইঙ্গিত করে কংগ্রেসম্যান এরিক সোয়ালওয়াল বলেছেন, ‘জো বাইডেন গতকালের মানুষ। এখন সময় এসেছে তাঁর হাতে ধরা মশালটি অন্য কারও হাতে হস্তান্তরের।’
বাইডেনকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন কমলা হ্যারিস। তবে কমলা হ্যারিসও দলের অনেক নেতা-কর্মীর, বিশেষত আফ্রিকান-আমেরিকানদের কাছে সমালোচিত হয়েছেন। বাইডেন ওবামার অনুগত সহকারী ছিলেন। অনেক আফ্রিকান আমেরিকান মনে করেন, বাইডেনকে আক্রমণ করা মানে ওবামাকে আক্রমণ করা।
সাবেক আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর ক্যারল মোসলি ব্রাউন বলেন, বাইডেন সম্বন্ধে কমলা হ্যারিস যা বলেছেন, তা ভুল। তিনি অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আর তাতেই ভুলটা হয়েছে।
অনেকেই কমলা হ্যারিসকে একসময় জো বাইডেনের রানিং মেট হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। এই বিতর্ক ও যুদ্ধের পর সেই সম্ভাবনা আর নেই। সান ফ্রান্সিসকোর সাবেক মেয়র উইলি ব্রাউন অবশ্য এখনো তেমন সম্ভাবনা বাতিল করেননি। তাঁর কথায়, জো বাইডেনের টিকে থাকার একমাত্র পথ হলো কমলা হ্যারিস যদি তাঁর রানিং মেট হতে রাজি হন। অন্যথায় বাইডেন এখনই তাঁর নির্বাচনী আশাকে বিদায় জানাতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.