একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়েছে ৬৯টি কেন্দ্রে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস পর কেন্দ্রভিত্তিক ভোটের ফল প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে দেখা গেছে, গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সারা দেশের ৬৯টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি কেন্দ্রে ১০০ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়েছে। যা রীতিমতো বিস্ময়কর এবং দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে বিরল। সমপ্রতি ৩০০ আসনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ৩০শে ডিসেম্বর ভোটের পরই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ও রিটার্নিং  কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসব ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। ইসির ওয়েবসাইটে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল - কেন্দ্র, মোট ভোটার, প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট, বৈধ ভোট, বাতিল ভোট, প্রদত্ত ভোট, শতকরা হার দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ইসি প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ৩০০ আসনের ৪০ হাজার ১৫৫ কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৯ জন।
এরমধ্যে ভোট পড়েছে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১১টি। অর্থাৎ ভোট পড়ার হার ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে বৈধ ভোট ৮ কোটি ২৬ লাখ ৪৫ হাজার ২২১ ভোট। আর বাতিল হয়েছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯০ ভোট।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংসদীয় আসন ১ থেকে ১০০ আসনের মধ্যে ২৯টি কেন্দ্রে, ১০১ থেকে ১৯৯ আসনের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রে এবং পরবর্তী ১০০ আসনের মধ্যে ১৮টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, এসব কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়লেও সবগুলো বৈধ ভোট ছিল না। বাতিল ভোট রয়েছে অনেক। সেক্ষেত্রে ওইসব ভোট কেন্দ্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করা বা অভিযুক্ত ভোট বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-৩ আসনের শিবপুর উপজেলার ২১৬ নম্বর কেন্দ্রের বিলস্বরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মোট ভোটার ২১১৬ জন। কেন্দ্রটিতে প্রার্থীরা পেয়েছেন যথাক্রমে মো. ওয়ায়েজ হোসেন ভুঁইয়া (হাতপাখা-১১৫), জহিরুল হক ভুঁইয়া মোহন (নৌকা-৮৯৫), সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (সিংহ-৪১০), আলমগীর কবির (লাঙ্গল-০), রাজীব হোসেন (গোলাপ ফুল-১০) ও ডা. মো. আলতাফ হোসেন (আম-২)। এখানে বৈধ ভোট ১৪৩২টি; বাতিল ভোট ৬৮৪টি। প্রদত্ত ভোট ২১১৬টি। এর মানে এ কেন্দ্রের ভোটারদের সবাই ভোট দিয়েছেন। এবার সংসদ নির্বাচনের সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ করে বিএনপিসহ অনান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন অনেক প্রার্থী। ‘জাল ভোট’ দেয়া, এজেন্টদের ‘বের করে দেয়া’, ‘একতরফা ভোট’ দেয়া, ‘কারচুপি’ ও ভোট ‘ডাকাতির’ অভিযোগ এনে ফল চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালেও গিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। অবশ্য ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের তালিকা গেজেট আকারে গত পয়লা জানুয়ারি প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ১০০ শতাংশ ভোট পড়া এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ফলাফল ও নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট প্রকাশ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে এখন আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কমিশনের এই কর্মকর্তা।
শতভাগ ভোট যেসব কেন্দ্রে: সারাঙ্গাই পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় ভবন-১ (পুরুষ), টেংগনমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা), কোদালখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ এস সি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁচাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (মহিলা), কাঁচাবাড়ী চৌপতির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিনিয়া ধনীর বাজার উচ্চ বিদ্যালয়, গাড়ালচৌকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এনায়েতপুর ইসলামিয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা, খিয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শীতলগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাহাপাড়া হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অর্জুনডারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোচাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাগুরা শামীম এন্ড শাকিল কারিগরী কলেজ, সিধুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোর্দ্দকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভালাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভারশোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর (২য়) বি এল উচ্চ বিদ্যালয়, দোবিলা উচ্চ বিদ্যালয়, গুপিয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৈজুরী মহিউল ইসলাম সিনিয়র মাদ্রাসা, রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানজাহান আলী ডিগ্রি কলেজ, আগৈলঝাড়া এস এম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নাঘিরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গফুর মল্লিক পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খিদির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঝিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিসকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, জোরবাড়ীয়া উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজবাগ পাছপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ দত্তগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আঠারদানা উচ্চ বিদ্যালয়, দ. ঘাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাতীখলা উচ্চ বিদ্যালয়, চরশাঁখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকহরিচরণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণভিটা উচ্চ বিদ্যালয়, ফাউগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলস্বরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াদিয়া কেএইচ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দুলালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাড়ইলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাদিম নগর ইউনিয়ন অফিস, পরমানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড্ডাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিটঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পেটুয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুজাফ্‌ফর আলী হাইস্কুল ও কলেজ, নিচহরা সমাজ কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়, কচুয়াই সিতাবিধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোটনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসা, উলুচামরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গাঝিরি ইউনুছ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
দলভিত্তিক ভোট: দলভিত্তিক ভোটের হিসেবে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৬১৫২৪২১৩ ভোট, বিএনপি ৯৯৮৫২০২ ভোট, জাতীয় পার্টি ৪৪০৭৯৩০ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২৫৫৩৭৩ ভোট, এলডিপি ৫৪,০৩১ ভোট, জেপি ১৯৭৪৮৭ ভোট, সাম্যবাদী দল ৩৮৭ ভোট, কৃৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১৪৪১১৫ ভোট, সিপিবি ৫৫৪২১ ভোট, গণতন্ত্রী পার্টি ১৬৪১ ভোট, ন্যাপ ১০০৩০ ভোট, ওয়ার্কার্স পার্টি ৬৪৬৮৪৪ ভোট, বিকল্পধারা ৫৬৫৯৪০ ভোট, জাসদ ৬৫১০১৭ ভোট, জেএসডি ১১৫০১৩ ভোট, জাকের পার্টি ১০৯৪৪০ ভোট, বাসদ ১৭৩৯৬ ভোট, বিজেপি ৪০১০০ ভোট, তরিকত ফেডারেশন ২৪৪৫১৭ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৯৭৯৬ ভোট, মুসলীম লীগ ১৫২৯৩ ভোট, এনপিপি ৩৬৬১১ ভোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ২১৮০০৯ ভোট, গণফোরাম ৫০১৭৩৭ ভোট, গণফ্রন্ট ৫২৭৭ ভোট, পিডিপি ৬১১৩ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩৫১৩ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ২৩৮০১ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩১৪৬৮ ভোট, কল্যাণ পার্টি ৪৪৪৩৬ ভোট, ঐক্যজোট ১১৩২৮ ভোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ৫০১৭১ ভোট, ইসলামী ফ্রন্ট ৬০৩৭২ ভোট, জাগপা ৩৭৯৮ ভোট, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ১৭২৬৩ ভোট, খেলাফত মজলিস ৬৯৮৩৮ ভোট, বিএনএফ ১৩২৮৯ ভোট, মুক্তিজোট ১২১৯ ভোট ও স্বতন্ত্র ১৪৯৮৪০১ ভোট।

No comments

Powered by Blogger.