রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলকে নাৎসি বন্দিশিবিরের সাথে তুলনা করলেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা

মিয়ানমারে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম কনসেনট্রেশান ক্যাম্প ও শহুরে বস্তিতে বাস করছে, যেমন পরিস্থিতি ছিল নাৎসি বাহিনীর অধীনস্থ ইউরোপে। জাতিসংঘের এক তদন্ত কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তে যে জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধানী মিশন কাজ করছে এবং গত বছর যারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনে, সেই মিশনের সদস্য ক্রিস্টোফার সিদোতি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, নির্যাতিত এই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেটা শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সিদোতি বলেন, যে ১২৮,০০০ মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারা এখন মধ্য রাখাইনের বিভিন্ন ক্যাম্পে এবং শহুরে বস্তিগুলোতে বাস করছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আছে, যেটাকে নাৎসিদের ইহুদি ক্যাম্পের সাথে তুলনা করা চলে।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি যে গ্রামগুলোতে আছে, সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সীমিত এবং তাদের বিয়ে করা এবং সন্তান জন্মদানের বিষয়টিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
সিদোতি বলেন, “এগুলো হলো কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্প – যেটা যা, তাকে সেটাই বলতে হবে। মধ্য রাখাইনে, সিত্তয়ের বাইরে ১২৮,০০০ ঘরবাড়িহারা রোহিঙ্গা বাস করছে, এবং সেগুলো শহুরে বস্তি হয়ে উঠেছে, ঠিক নাৎসি ইউরোপে ইহুদিরা যেভাবে বাস করতো”।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে সিদোতি এ সব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “গণ বহিস্কার ও গুলি করা হয়তো বন্ধ হয়েছে, সামরিক বাহিনী হয়তো তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলেছে – রাখাইন রাজ্যের চেহারা হয়তো বদলে গেছে – কিন্তু সঙ্কট মোটেই শেষ হয়নি”।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে মাত্র ৪০০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ এর মতো রোহিঙ্গা অবশিষ্ট আছে, যেখানে ২০১২ সালে ছিল ২ থেকে ৩ মিলিয়ন।
সিদোতি বলেন, “এক বছর আগে আমরা বলেছিলাম যে, সেখানে যে পরিস্থিতি দেখা গেছে, সেটা থেকে গণহত্যার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে”।
“গত দুই বছরে যেটা ঘটেছে, তাতে গণহত্যার উদ্দেশ্য আরও প্রবল হয়েছে। গ্রামবাসীরা এখনও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে, তাদের চলাফেরা সীমিত; জেলেরা মাছ ধরতে পারে না এবং শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। দূরে কোথাও যেতে হলে তাদেরকে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়। বিয়ে বা সন্তান নেয়ার জন্যও তাদের অনুমতি নিতে হয়। হাসপাতালে যেতে হলে আপনাকে হয়তো ছয়টি আলাদা বিষয়ে ছয়টি আলাদা কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। পুরো বিষয়টি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে এই সম্প্রদায়টি নিরবে হারিয়ে যায়”।
সিদোতি বলেন, তিনি আশা করছেন যে, প্যানেলের নতুন যে রিপোর্টটি কয়েক মাসের মধ্যে প্রকাশিত হবে, সেখানে গণহত্যার উদ্দেশ্যের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে।
এমন সময় তিনি এ সব মন্তব্য করলেন যখন জাতিসংঘ সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে রাখাইন ও চিন রাজ্যে জনগণের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সামরিক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গ্রুগগুলোর লড়াই যতই তীব্র হচ্ছে, ততই এই অপরাধের মাত্রা বাড়ছে।
রাখাইনে নতুন সহিংসতা শুরু হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী আর রাখাইন বৌদ্ধ যোদ্ধাদের বিদ্রোহী সেনাদের মধ্যে। জানুয়ারি থেকেই এই লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। এ যাবত এ লড়াই থেকে প্রাণ বাঁচাতে ৩৫,০০০-এর বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
>>>হান্নাহ এলিস, পিটারসেন ও ক্যারেন ম্যাকভেই
ইয়াঙ্ঘি লি, মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার

No comments

Powered by Blogger.