গুলিস্তানের ফুটপাত আবার হকারদের দখলে

গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করার পর দেড় মাসও টিকল না। পথচারীদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে আবারও হকাররা বসে গেছেন। এতে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সড়কে যানজটের মাত্রাও বেড়েছে। গত কয়েক দিনে গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এরপর থেকে প্রায় দেড় মাস ধরে গুলিস্তান এলাকা হয়ে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল পথচারীরা। তবে অতীতের মতো এবারও উচ্ছেদের পর হকার বসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা।
শান্তিনগর মোড় থেকে প্রতিদিনই বংশালে যাওয়া–আসা করেন ব্যবসায়ী কবির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই গুলিস্তান এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদের পর গোটা এলাকাতেই যেন স্বস্তি নেমে এসেছিল। তবে এবারও এই অভিযান টেকসই না হওয়াটা দুঃখজনক। অল্প কিছু লোক জোরজবরদস্তি করে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করবেন আর নগরীর লাখ লাখ পথচারী বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাবে, এটা মোটেই যুক্তিসংগত নয়। এটা অনুচিত। এ কারণে শহর স্থবির হয়ে পড়েছে।
ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ এইচ এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটপাত থেকে হকার সরানোর সিদ্ধান্তে কোনো শিথিলতা আসেনি। সিদ্ধান্ত আগের মতোই আছে। যদি কেউ বসে থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় হকার সরানো কঠিন কাজ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘নগর পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাঁদের কেউ ঢাকা ছেড়ে যাননি। সুতরাং এ বিষয়ে নগরের শীর্ষ কর্তাদের উচিত আমাদের সহযোগিতা করা।’
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, জিপিও ভবনের পশ্চিম পাশের সড়ক, জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স, গোলাপ শাহ মাজারের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত রমনা ভবন ও রেলওয়ে সুপার মার্কেট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের সড়কের ফুটপাত দখল করে আবার আগের মতোই হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে জিপিও ভবনের পশ্চিম পাশের সড়কের ফুটপাতে ও খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সের সামনে হকাররা বিভিন্ন প্রকার ফল বিক্রি করছেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের ফুটপাতে পোশাক নিয়ে বসেছেন হকাররা।
রেলওয়ে সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে শিশুদের পোশাক বিক্রি করছেন হ‌ুমায়ূন। তিনি বলেন, ‘আগের মতো কড়াকড়ি নেই। তাই বসেছি। তবে যখন পুলিশ আসে, তখন সরে যাই।’ তবে কায়সার নামের আরেক হকার বলছেন, পুলিশ তাঁদের বসতে দিচ্ছে না। দক্ষিণ দিকে অভিযান শুরু হলে উত্তর দিকের হকাররা সরে যান। আবার উত্তর দিকে শুরু হলে দক্ষিণ দিকের হকাররা সরে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি স্থানে হকাররা বসলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিও আছে গুলিস্তানে। কয়েকটি স্থানে পুলিশের পাহারাও দেখা গেছে।
গুলিস্তান এলাকায় আবার হকাররা পণ্য বিছিয়ে বসলেও মতিঝিল ও বায়তুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের সড়ক এখনো অনেকটাই হকারমুক্ত দেখা গেছে। কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে হকাররা বসলেও ওই পথ হয়ে এখনো নির্বিঘ্নে পথচারীরা চলাচল করতে পারছেন। তবে পল্টন এলাকায় কয়েকটি স্থানে হকারদের বসতে দেখা গেছে।
গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় ইয়াহিয়া নামের আরেক পথচারী বলছেন, ‘গত দেড় মাস স্বচ্ছন্দে গুলিস্তান এলাকায় চলাচল করেছি। যানবাহনের চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। তবে আস্তে আস্তে আগেরই চিত্রই দেখা যাচ্ছে।’
গুলিস্তান এলাকায় হকাররা বসেছেন, এটা জানা নেই দাবি করে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এস এম মুরাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ও ক্রাইম বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে এই পরিস্থিতি ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিস্তান এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। নতুন করে কেউ যাতে বসতে না পারে, সে ব্যাপারে ডিএসসিসি উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.