ডার্ক চকোলেটের পেছনের অন্ধকার গল্প! by রাজিয়া সুলতানা রোজী

চকোলেট তো আমাদের অনেকেরই খুব বেশি পছন্দ। বিশেষত ডার্ক চকোলেট। কখনো প্রেমিক তার প্রেয়সীর মান ভাঙায় ডার্ক চকোলেটের বিনিময়ে, কখনো বা ছোট্ট শিশুর মুখে তার বাবা হাঁসি আনে ডার্ক চকোলেট দিয়ে। নামটা তো ডার্ক চকোলেট, কিন্তু এর পেছনের গল্পটা?? হ্যাঁ, গল্পটা নামের চেয়েও অনেক অনেক বেশি আঁধারে বেষ্টিত!
আপনি জানেন কি এতো ইয়াম্মি চকোলেটের গন্ধটাও অনেকের জীবনের জন্য এক অভিশাপ? না, তাদের একদমই ইচ্ছে নেই এই চকোলেটের সংস্পর্শে থাকার। বরং তারাতো পালাতে চায় ঐ তথাকথিত চকোলেটি দুনিয়া থেকে!
আফ্রিকার ১.৮ মিলিয়ন শিশু পালাতে পারে না তাদের বিভৎস শৈশব থেকে! তাদের শৈশবের বলিদানই হলো ডার্ক চকোলেট! আইভরি কোস্ট আর ঘানা। পশ্চিম আফ্রিকার এই দু’টি দেশে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ কোকো(ডার্ক চকোলেটের মূল উপাদন) চাষ করা হয়।
প্রতিদিনই মালি, বুরকিনা, ফাসো ইত্যাদি প্রতিবেশি দেশ থেকে হাজার হাজার শিশু পাচার করা হয় আইভরি কোস্ট আর ঘানাতে, চকোলেটের ফার্মে কাজ করার জন্য। কখনো খাবার বা পড়াশোনার লোভ দেখিয়ে এদের কিনে পাচার করা হয়। জানেন কি এদের শৈশবের মূল্য ওদের পরিবারের কাছে মাত্র কয়েক ডলার?
কাজের ধরণ? সকাল ৬ টা থেকে রাত ৯ টা অবধি এই শিশুগুলি অমানুষিক পরিশ্রম করে।
খাদ্য হিসেবে পায় সস্তা সেদ্ধ ভুট্টা আর কলা। রাতে শেকল দিয়ে বেঁধে দরজা জানালাহীন কাঠের আস্তাবলে ফেলে রাখা হয় যাতে পালাতে না পারে। কেউ পালানোর চেষ্টা করলে তার কপালে বেঁধরক মার আর যৌন হয়রানি।
মার খেয়ে বা ধর্ষণে কেউ মরে গেলে তার শরীরটা ছুড়ে দেয়া হয় নদীতে বা কুকুরের মুখে। মায়া ভালোবাসার ছিটেফোটাও নেই এখানে। আছে নৃশংসতা, আছে রক্ত, যেন শুকিয়ে কালো হয়ে আছে পৃথিবীজোড়া ফ্রীজে রাখা ডার্ক চকোলেটে।
কোকো ফিল্ডের পোকা, সাপ, বিচ্ছুর কামড়ে অনেক শিশুই মারা যায়, অবশ্য তাতে মালিকদের কিছু এসে যায় না। দারিদ্র থাকবে, বাচ্চার যোগানও তো থাকবে। ৫-১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের তো কোনো মজুরী দেয়া হয় না। বড় কোম্পানিগুলো চুপ থাকবে সস্তায় কোকো পাওয়ার আশায়। ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল্য এখানে উপহাস মাত্র।
কোকো ফার্মের ৪০ শতাংশ মেয়ে শিশু। তাদের বয়সন্ধি আসে ফার্মেই। ফার্মের মালিক, শ্রমিক, ঠিকাদার এমনকি পুলিশের যৌন চাহিদা মেটাতে হয় ওদের।যৌন রোগ ওদের আষ্টেপৃষ্টে ধরে। পঁচে গলে যায় শৈশব। স্বপ্নেও পোকা আসে, ভয়ঙ্কর সব পোকা। খুবলে খায় হৃদয়, চকোলেটি হৃদয়!
এই শিশুগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয় ম্যাশেটি। ম্যাশেটি এমন এক ছুড়ি যা দিয়ে ১টা শিশুকে কয়েকমিনিটে কিমা করে দেয়া যায়। এই ছুড়িগুলোই শিশুদের হাতে দেয়া হয় কোকোবিন পেড়ে বস্তায় রাখার জন্য। কারো আঙুল কাটে, কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত। ১০০ কেজি বস্তা ওদের পিঠে চাপানো হয়। বিশ্রামের জন্য থামলেই চাবুকের আঘাত।
কি ভাবছেন? মধ্যযুগের কোন বর্বতার কাহিনী এটা?? না। এটা আমাদেরই বিশ্বায়ন, ফেসবুক, ইত্যাদির তথাকতিত আধুনিক পৃথিবীর এক কাহিনী। এই আধুনিক যুগেই এই ক্রীতদাস প্রথা চলছে। এখানে মানবতা দাত বের করে উপহাস করে! আর এই গভীর অন্ধকার থেকেই বের হয় আমার আপনার প্রিয় ডার্ক চকোলেট!

No comments

Powered by Blogger.