আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী ঝুঁকিতে নিরাপত্তা by দীন ইসলাম

আকাশপথে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী একসঙ্গে পরিবহন করলে নানা ঝুঁকিতে থাকবে উড়োজাহাজ। এক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। এরপর সোনাসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস চোরাচালানের বিষয়ও রয়েছে। এমনটা চলতে থাকলে দুই রুটের যাত্রী একসঙ্গে পরিবহন দেশের এভিয়েশন শিল্পে অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের যাত্রীদের একসঙ্গে নেয়া হয় না।
আলাদাভাবে পরিবহন করা হয়। আমাদের দেশে এর ভিন্নতা দেখা যায়। এ কারণে চোরাচালানিরা অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের কাছে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের বার দিয়ে সুযোগ মতো উড়োজাহাজ ছেড়ে নিজ গন্তব্যে চলে যান। গত রোববার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে উঠে ছিনতাই চেষ্টা করেছেন অভ্যন্তরীণ  রুটের যাত্রী পলাশ আহমেদ।
ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামে অবতরণের পর কমান্ডো অভিযানে মারা যায় ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ। এ ঘটনার পর বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলে ফটো আইডি প্রদর্শনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত বেশ কয়েকটি ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের পরিবহন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালিত বিমানের পাঁচটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে এবং সিলেট থেকে ঢাকায় আসার সময় দুটি ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই, ঢাকা-চট্টগ্রাম-আবুধাবী, ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট, ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-জেদ্দা রুটে পাঁচটি ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন করা হয়। এছাড়া মাস্কাট-সিলেট-ঢাকা ও লন্ডন-সিলেট-ঢাকা রুটের ফ্লাইটেও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন করা হয়। এ কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকে আকাশের পথের পরিবহনটি। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা তল্লাশি করেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী আনা-নেয়া করা হয়।
এজন্য নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রশ্নই আসে না। এদিকে রিজেন্ট এয়ারলাইন্স আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালিত তিনটি ফ্লাইট অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক, ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-দোহা রুটে যাত্রী পরিবহন করা হয়। এসব ফ্লাইটও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স আগামী ৩১শে মার্চ ঢাকা থেকে চেন্নাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে যাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে তিন দিন এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করবেন তারা। এ ফ্লাইটটি তারা চট্টগ্রাম হয়ে পরিচালনা করবে। প্রতি সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এবং চট্টগ্রাম থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া চেন্নাই থেকে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে অভ্যন্তরীণ যাত্রী থাকলে উড়োজাহাজ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে। ঝুঁকি কমাতে হলে দুই ধরনের ফ্লাইটের যাত্রী এক ফ্লাইটে আনা-নেয়া বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন তল্লাশি আরও কঠোর হতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে বিমান খাতের যেকোনো দুর্ঘটনার সঙ্গে দেশের মান সম্মান জড়িত। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.