তুষারের স্বীকারোক্তি: শিশু ধর্ষণের পর হত্যা by শাহনেওয়াজ বাবলু

সকাল ১০টা। বাড়ির পাশে খেলছিল চারবছর বয়সী নাবিলা আক্তার। সামনে আরেক নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদে মোবাইলফোনে ব্যস্ত মেডিকেলের ছাত্র মেহেরাজ হোসেন তুষার। মোবাইলফোনে অশ্লীল ভিডিও দেখছিলো তুষার। ঠিক ওই সময় তার নজর পড়ে খেলতে থাকা শিশু নাবিলার ওপর। তাকে ছাদে ডাকে তুষার। শিশু নাবিলা সেখানে গেলে তাকে আবার নিচে নিয়ে যায়।  সেখানেই পশুত্বের প্রকাশ ঘটায় তুষার। নির্মাণাধীন নির্জন বাড়ির এককোণে শিশুটিকে ধর্ষণ করে সে।
এ সময় নাবিলা চিৎকার করলে তার গলা চেপে ধরে তুষার। ছটপট করতে থাকে শিশু নাবিলা। একপর্যায়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় এই ফুটফুটে শিশুটি। এ ঘটনায় তুষারকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে এভাবেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে। প্রায় দেড় মাস পর গতকাল আসামি তুষারকে গ্রেপ্তার করে কুমিল্লা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১টায় কুমিল্লা সদর উপজেলার বাখরাবাদ এলাকা থেকে তুষারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সহিদার রহমান মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতে স্বীকার করেছে তুষার। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র  মেহেরাজ হোসেন তুষার।
গত ১৭ই ডিসেম্বর সকালে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় নাবিলা আক্তার। পরের দিন ভোরে নাবিলার লাশ পাওয়া যায় পাশের এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। সিমেন্টের ব্যাগে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছিল ফুটফুটে এই শিশুটিকে। ১৮ই ডিসেম্বর সকালে নাবিলার লাশ দেখতে পান স্থানীয় নূরানী মাদ্‌রাসার শিক্ষক তাজামুল ইসলাম। তিনি জানান, ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে গিয়ে নাবিলার লাশ দেখতে পান। পরে সবাইকে খবর দেন তিনি।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান নাবিলা। তার বাবা আবুল কালাম প্রবাসী। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরের দিনই ছুটে আসেন দেশে। গত ১৯শে ডিসেম্বর আবুল কালাম বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
নাবিলার পিতা আবুল কালাম মানবজমিনকে বলেন, আমার এই শিশু বাচ্চাটির কী দোষ ছিল। সেতো কারো ক্ষতি করে নাই। পৃথিবীর কোনো কিছুই সে বুঝতে শিখেনি। এই শিশুটিকে কিভাবে ধর্ষণ করা হলো, কিভাবে হত্যা করা হলো? তিনি রাষ্ট্র ও দেশবাসীর কাছে তার শিশুসন্তানটির হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, আর যেন কোনো মা-বাবা এভাবে তার সন্তানকে হারাতে না হয়। এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মানবজমিনকে বলেন, একটা অবোধ শিশুকে যৌন নির্যাতন ও হত্যা- এটা কারো কাম্য নয়। আমি এর উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.