সুশাসন, গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সামরিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে প্রায় সোয়া ঘণ্টা বৈঠক করলেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে নয়া দূতের এটি ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ হলেও সেখানে সুশাসন, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সামরিক খাতে সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নব গঠিত সরকারের সঙ্গে উল্লিখিত বিষয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করার আগ্রহ দেখিয়েছেন মার্কিন দূত। একই সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
নির্বাচনের অনিয়মগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত আলাদাভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা উভয়েই আলোচনার বিষয়গুলো খোলাখুলিভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রদূত তার বিবৃতিতে বলেন, সুশাসন, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সামরিক সহায়তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পর্ক অনেকদিনের জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তিনি পাড়াশোনা করেছেন।
সেখান থেকে  এমফিল এবং ডিগ্রি নিয়েছেন। দেশটিতে বিভিন্ন দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত। তাকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্র সচিব সদ্য যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সেখানে তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠক করেছেন। আমি মন্ত্রীকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি তিনিও সফর করবেন। আর্ল রবার্ট মিলার বাংলাদেশে ৩ বছরের জন্য দূত নিযুক্ত হয়েছেন জানিয়ে বলেন,  আমার সময়ে আমি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বাড়াতে চাই। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ। আমরা নানা বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছি। তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে কম। ওটা উঠেছিল। আমি বলেছি, যে কোয়ার্টার নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলছে, সেখানে কিছু ঘটনা থাকতে পারে। তারা তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা কিভাবে আরও জোরদার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, তারা বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চান। রাষ্ট্রদূত এ আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সম্মতি দিয়েছেন জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি বলেছেন, আপনারা তো অনেক দেশ থেকে কেনেন। আমাদের থেকেও নেন। আমরা বলেছি আপনাদের জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি। আমরা তুলনামূলক প্রাইসে কিনি। দেখি কি করা যায়। এ সময় অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আমরা ফেরত চেয়েছি। আমরা বলেছি এটা কোর্টের আদেশ। তার বিচার হয়েছে ওপেন আদালতে। সেখানে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আমরা সেটি কার্যকর করতে চাই। নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এমন দণ্ড দিলে এবং আসামি অন্য দেশে থাকলে ওয়াশিংটন তাকে ফেরতে চেষ্টা বা চাপ দিতো। আমরা তাই তাকে ফেরত চাই। তাছাড়া ওই ব্যক্তি নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আগেও একজনকে ফেরত দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর কথার জবাবে মার্কিন দূত কি বলেছেন? জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, তিনি বলেছেন আমার অনুরোধ ওয়াশিংটনে পাঠাবেন। এ নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি এ নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে এখনও আলোচনা করিনি। আমি নতুন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে কথা বলতে চেয়েছে, আমি বলেছি আলোচনা হতেই পারে। এদিকে পৃথক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রথম বিদেশ সফরে জার্মানি যাচ্ছেন। ফেরার পথে আবুধাবি সফর করবেন। জার্মানি সফরে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে সরকার প্রধানের বৈঠকের চেষ্টা চলছে মর্মে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে তা নাকচ করেন মন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.