সুবর্ণচরে নির্যাতিতার পাশে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা by শাহনেওয়াজ বাবলু ও নাসির উদ্দিন বাদল

ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা গতকাল নোয়াখালী যান। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত নারীর পাশে তারা কিছু সময় অবস্থান করেন এবং তার ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। এ সময় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নির্যাতিতাকে আর্থিক সহযোগিতাও দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই নারীর মাথায় হাত বুলিয়ে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, বোন আমরা তোমার পাশে আছি। তোমার কোনো ভয় নেই। এই নির্মমতার অবশ্যই একদিন বিচার হবে। আল্লাহ বিচার করবেন।
ধর্ষিত নারীকে সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন ওই নারীর অটোচালক স্বামীও। এ সময়ে তার পাশে থাকা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানসহ অন্য নেতারাও ছিলেন অশ্রুসজল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীও ওই নারীকে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেন। গত ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর রাতে নিজের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হন বাগ্যা গ্রামের এই নারী। স্বামী সন্তানকে বেঁধে রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগীরা দল বেঁধে তাকে ধর্ষণ করা হয়।
এদিকে নির্যাতিতা নারীকে দেখে এসে বিকালে নোয়াখালী জেলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এখানে তরুণদের মাঝে যে ক্ষোভ দেখলাম, যে উচ্ছ্বাস দেখলাম এই ক্ষোভকে শক্তিতে পরিণত  করতে হবে। এরা (সরকার) চোরাবালির উপর দাঁড়িয়ে আছে। এখন আমাদের প্রয়োজন শুধু ঐক্য, ঐক্য, ঐক্য। জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাত্তর সালের ২৫শে ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে ৩০শে ডিসেম্বর এই বাংলাদেশে একটি সরকার তার সমস্ত প্রশাসনকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ওপর ঠিক একই কায়দায় হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার তারা কেড়ে নিলো। আমরা বাধা দিতে পারিনি।
কেন ভোটের দিন জনগন জেগে ওঠেনি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যে কথা আমরা বার বার বলেছি, বার বার বিভিন্ন জায়গায় ছুটে গিয়ে বলেছি- জেগে উঠুন, আপনাদের অধিকার রক্ষা করুন। আমরা মরার আগেই মরে যাচ্ছি? কেন মরে যাচ্ছি? কেন উঠে দাঁড়াচ্ছি না। এটা আমার দেশ, এই মাটি আমার। আমি এর মালিক, জনগণ এদেশের মালিক। যারা চাকরি করবে, সমস্ত সুখ ভোগ করবে, জনগণের পয়সায় তারা সরকার চালাবে তারা আমাদের খাবে, আমাদের পরবে আর আমাদের ওপরে গুলি চালাবে?’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষোভ হয় না? রাগ হয় না,? উত্তেজনা হয় না? রুখে দাঁড়াতে পারি না আমরা?
সেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এই একটা সুযোগ আমরা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন তৈরি করে আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে। কিন্তু আমরা পারিনি। তাই বলে কি সব শেষ হয়ে গেছে। হয়নি। কিছুই শেষ হয়নি। আমরা আবার রুখে দাঁড়াবো, আমরা আবার উঠে দাঁড়াবো শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে আমার যে বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে এর প্রতিশোধ নেবো, আমার যে ভাইয়ের ঘর পোড়ানো হয়েছে তার প্রতিশোধ আমরা নেবো। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে সকলে উঠে দাঁড়ান বিজয় হবো ইনশাআল্লাহ।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার মিটিংয়ে বলেছেন যে, দানবীয় আচরণ করবেন না, দানবে পরিণত হবেন না।
আপনি তো দানব হয়ে গেছেন। আমি বলি না, এসকে সিনহা সাহেব (সাবেক প্রধান বিচারপতি) বলেছেন একটা দানব তৈরি হয়েছে। সেই দানব থেকে মুক্তি পেতে হবে, পাথর বুক থেকে সরাতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার আলো নিয়ে আসতে হবে, আমাদেরকে মুক্তির সংগ্রামে যেতে হবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় এর আগে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, প্রশ্ন এসেছে ভোট। ভোট তো হয় নাই। ভোটের তারিখ ছিলো ৩০শে ডিসেম্বরে। ২৯ তারিখে ব্যালট শেষ। আমি ১৯৫৪ সালে ভোট দিতে গেছি, সেই থেকে এই পর্যন্ত সব ভোট দেখেছি, ভোটে অংশগ্রহণ করেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভোটের ইতিহাস আমি পড়েছি এই ধরনের কলঙ্কিত উলঙ্গ ভোট ডাকাতি নয়, মহাডাকাতি। এরকম ভোট কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এটা ঘৃণা করার ভাষা নেই।
সারা বাংলাদেশ সুবর্ণচর হয়ে যাবে। মা-বোন-মেয়ে নিয়ে মান ইজ্জতের সঙ্গে বেঁচে থাকবেন কিভাবে? এদের খপ্পরে আক্রমণে সুবর্ণচরের এক মহিলার শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে, তার শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে। আমার সেই বোনকে আমরা দেখতে এসেছি। একাত্তরে যেভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, এদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে মান ইজ্জত নিয়ে কেউ বাঁচতে পারবে না। এদের রুখতে হবে, এই জালেমদের রুখতে হবে। একাদশ নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের শপখ গ্রহণ অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) তড়িঘড়ি করে শপথ নিয়েছেন। আপনি তো ভোটে জিতেন নাই। আপনার শপথ নেয়া বেআইনি। এই সংসদ (দশম) এর মেয়াদ আছে ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত। সেই সংসদ বাতিল করেছে এটা আমি কোনো পত্রিকায় দেখি নাই।
বাংলাদেশে ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ সদস্য হলো ৬শ’। আপনি শপথ নিলেন কিভাবে। ওই সংসদ বাতিল না করে কিভাবে শপথ নিলেন আপনারা। এই শপথ বেআইনি ও অবৈধ। আপনি শপথ সংবিধানবিরোধী ও নীতি নৈতিকতা বিরোধী। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন করবে বলে জানান রব। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচন হয়নি, প্রহসন হয়েছে। আজকে আইন নেই, বিচার নাই, প্রশাসন নেই, পুলিশ নাই। সব দলীয় হয়ে গেছে। এদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে হলে প্রথম নিজেকে তৈরি করতে হবে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নির্যাতিতা নারীকে দেখতে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও জেএসডি সভাপতি আ.স.ম. আবদুর রব, বিএনপির আবদুল আওয়াল মিন্টু, সৈয়দা আশরাফ পাপিয়া, মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ্‌ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জয়নুল আবদিন ফারুক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শামীমা বরকত লাকীসহ বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার বোন নোয়াখালীতে ধর্ষিতা হয়েছেন তিনি ৪ সন্তানের মা। আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জনগণের কাছে এর বিচার দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।

No comments

Powered by Blogger.