আশরাফের প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মনোনয়নপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। বিএনপি’র তরফেও এ নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার লঙ্ঘন করে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার ৬টি আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী মনোনয়নপত্র বাছাই করে বৈধ ও অবৈধ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
সকালে কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর) আসনের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। বাছাইয়ে এই আসনে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী ১৩ জনের মধ্যে বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থী এডভোকেট শরীফুল ইসলাম শরীফ ও খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল খানসহ মোট পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। তবে এ আসনে বিএনপি’র অপর প্রার্থী রেজাউল করিম খান চুন্নুর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মো. মশিউর রহমান হুমায়ুনসহ এ আসনে মোট আট জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় বিএনপি প্রার্থী ঢাকা বিভাগীয় সাবেক স্পেশাল জজ মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হলফনামায় স্বাক্ষরের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে তা যথাযথ আইন মেনে দাখিল করা হয়নি অভিযোগ করে মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি প্রার্থী রেজাউল করিম খান চুন্নু ও তার আইনজীবী রিটার্নিং অফিসারকে বলেন- সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই ও আত্মীয়রা জানিয়েছেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন অসুস্থ ও আনকনসাস ব্যক্তি। তিনি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন থাকায় সশরীরে আসতে পারেননি। তাঁর মনোনয়নপত্র বাংলাদেশে বসে নোটারি করা হয়েছে। কিন্তু নোটারি পাবলিকের দেশের বাইরে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাঁর (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) হলফনামা ও ফরম আইনত বাতিল হবে। তবে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলারের উপস্থিতিতেও স্বাক্ষর করার বিধান রয়েছে জানিয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন। বিএনপি প্রার্থী রেজাউল করিম খান চুন্নু ও তার আইনজীবী জানান, হলফনামায় স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করা ছাড়াও নতুন আইনের বিধান অনুযায়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে সেখানে নির্বাচনে ব্যয়ের জন্য টাকা জমা রাখতে হবে। দেশের যে কোনো ব্যাংকে ম্যানেজারের সামনে স্বাক্ষর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম থাইল্যান্ডের হাসপাতালে চার মাস ধরে অচেতন অবস্থায় আছেন।
তাই তাঁর পক্ষে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলারও কোনো সুযোগ নেই। এতে কোনো অবস্থাতেই তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ হতে পারে না। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না করা সত্ত্বেও তার মনোনয়নপত্র বৈধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে- সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্রে টিপসই দেয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অচেতন হয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। কেউ বিদেশে অবস্থান করলে তার স্বাক্ষর কিংবা টিপসই সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ অ্যাম্বেসির একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে, যার মর্যাদা হবে প্রথম শ্রেণির একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সমমানের। এ ধরনের কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত হয়নি সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র। তার মনোনয়নপত্র নোটারি করা হয়েছে বাংলাদেশে, যা আইনসিদ্ধ নয়।
সৈয়দ আশরাফের নামে নির্বাচনী কোনো ব্যাংক একাউন্ট নেই, যেখান থেকে নির্বাচনী খরচ চালানো হবে। তাহলে সৈয়দ আশরাফের মনোনয়নপত্র বৈধ হলো কিভাবে? উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে বৈধ ঘোষিত অন্য প্রার্থীরা হলেন- গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, কৃৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম তারেক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী মো. এনামুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ প্রার্থী মুহাম্মদুল্লাহ জামী।

No comments

Powered by Blogger.