অভিনেত্রীর ‘সি-থ্রু’ পোশাক নিয়ে মিশরে তোলপাড়

মিশরের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রানিয়া ইউসেফ (৪৪)। বৃহস্পতিবার তিনি উপস্থিত হয়েছিলেন কায়রো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তার পর থেকে তাকে নিয়ে যেন ঝড় উঠেছে সেখানে। কেউ তার সমালোচনায় বাতাস গরম করে তুলেছেন। কেউ তার পক্ষে কথা বলছেন। ওই চলচ্চিত্র উৎসবে রানিয়া যে পোশাক পরে উপস্থিত  হয়েছিলেন তা নিয়েই এত আলোচনা-সমালোচনা। তিনি ওইদিন পরেছিলেন একটি কালো লেসি ড্রেস। এর ভিতর দিয়ে তার কোমরসন্ধিস্থল থেকে পুরো পা দেখা যাচ্ছিল।
এমন পোশাককে ইংরেজিতে ‘সি-থ্রু ড্রেস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এমন পোশাকের ভিতর দিয়ে কারো শরীরের সবটা দেখা যায়। এজন্য অভিনেত্রী রানিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দু’জন আইনজীবী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এ মামলায় আগামী মাসে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে রানিয়াকে। শনিবার বিচার বিভাগের একটি সূত্র এ কথা বলেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, রানিয়া যে পোশাক পরেছিলেন তার নিচে স্পষ্ট দেখা যায় আরেকটি ড্রেস, যা সাঁতারের পোশাকের মতো দেখায়। তবে কালো লেসি ড্রেসের ভিতর দিয়ে তার সেই কালো পোশাকটি পরিষ্কার দেখা যায়। এর বাইরে বেরিয়ে ছিল নিতম্বদেশের অনেকটা অংশ। এর মধ্য দিয়ে লাম্পট্যকে উস্কানি দেয়া হয়েছে বলে ওই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দু’জন আইনজীবী আমরো আবদেল সালাম ও সমির সাবরি। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে অভিনেত্রী রানিয়ার ৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। সমির সাবরি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, রানিয়া ইউসেফ যে পোশাকে উপস্থিত হয়েছিলেন তাতে সামাজিক মূল্যবোধ, প্রচলিত রীতিনীতি, নৈতিকতার মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় নি। এর মধ্য দিয়ে তিনি ওই উৎসবের সুনাম ও মিশরীয় নারীদের সুনাম নষ্ট করেছেন। আগামী ১২ই জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
রানিয়া ইউসেফ ইস্যুতে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভক্তি। অনেকেই তার সমালোচনা করছেন। আবার অনেকে তার পক্ষ নিয়েছেন। তারা বলছেন, রানিয়া যে পোশাকই পরতে চান তা পরার অধিকার আছে তার। এ ইস্যুতে কথা বলেছে মিশরে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সংগঠন দ্য ইজিপশিয়ান এক্টরস সিন্ডিকেট। তারা রানিয়া ইউসেফের নাম বা অন্য কোনো সেলিব্রেটির নাম উল্লেখ না করে বলেছে, চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিত হওয়া অতিথিদের কেউ কেউ প্রচলিত রীতি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয়ে তোয়াক্কা করেন নি। এতে উৎসব ও এই সংগঠনের মানহানি হয়েছে।
এই সংগঠনের একজন সদস্য রানিয়া ইউসেফ। সংগঠন এমন বিবৃতি দেয়ার পর তার হুঁশ ফিরেছে। তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে পরে এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, সম্ভবত এই পোশাকটি বাছাই করার ক্ষেত্রে আমি ভুল হিসাব করেছিলাম। এটাই প্রথমবার আমি এমন পোশাক পরেছি। বুঝতে পারি নি এতে এত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। মিশরে আমরা যে মর্যাদা লালন করেছি তার প্রতি আমি আবারও প্রতিশ্রুতির প্রত্যয় ঘোষণা করছি।
উল্লেখ্য, মিশর হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রক্ষণশীল দেশ। লাম্পট্যকে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে এ বছর শুরুর দিকে চার দিনের জন্য একজন গায়িকাকে আটক করেন প্রসিকিউটররা। ওই গায়িকা অনলাইনে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। তাতে তাকে নাচতে দেখা যায়। তার ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওই ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত বছর আরেকজন পপ গায়িকাকে একই রকম অভিযোগে দু’বছরের জেল দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.