আমেরিকার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা

পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আমেরিকা ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি ও নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিশ্বের অন্য দেশকেও এই নিষেধাজ্ঞায় শামিল করার চেষ্টা করছে আমেরিকা। কিন্তু ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আমেরিকা কতটুকু সফল হয়েছে সেটাই এখন প্রশ্ন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় দুই দফায় ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের বিরুদ্ধ প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে সই করেন। এরপর আগামী নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফায় ইরানের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। কিন্তু ইরানের ওপর ট্রাম্পের এসব নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। দখলদার ইসরাইল ও কয়েকটি আরব দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশ ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে সমর্থন করেনি।
ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লু মেয়ার গত শুক্রবার শ্লোভাকিয়ায় এক বৈঠকে বলেছেন, “আমরা ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারব কিনা সে সিদ্ধান্ত আর আমেরিকাকে নিতে দেয়া হবে না।" তিনি বলেন, " ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ফলে ইউরোপের সামনে আমেরিকার কাছ থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে।"
ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লু মেয়ার
অস্ট্রিয়ায় ইউরোপীয় নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ওয়ার্নার ফাসলাব্যান্ড গতকাল (শনিবার) তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক পরিষদের প্রধান কামাল খাররাজির সঙ্গে সাক্ষাতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপের অবস্থান ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছেন। তিনি আরো বলেন, "আমেরিকার প্রভাব মুক্ত হয়ে ইউরোপের স্বাধীন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অভিন্ন মুদ্রা ইউরোকে শক্তিশালী করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
এসব বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, ইউরোপ অন্তত এটা বুঝতে পেরেছে আমেরিকার প্রভাব বলয় থেকে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই কেবল ইউরোপের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যত নির্ভর করছে। চীনও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং দেশটি আমেরিকার প্রভাবমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। খ্যাতনামা মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক ডেভিড ইগনাতিউস ইরানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণের নেতিবাচক পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সব দেশের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ট্রাম্প প্রথমে মোড়লিপনা এবং  এরপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের ইচ্ছেমত সমঝোতা করার চেষ্টা করেন যা অন্যায্য। মার্কিন এ সাংবাদিক আরো বলেছেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশল হচ্ছে কঠোর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে ইরানকে দুর্বল করে দেয়া এবং এরপর পরমাণু ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এমন এক সমঝোতায় আসতে বাধ্য করা যাতে ট্রাম্প এটাকে তার বিরাট সাফল্য হিসাবে সবাইকে দেখাতে পারেন।"
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবকে অতিরিক্ত তেল উত্তোলনে উৎসাহিত করেছেন যাতে ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা যায়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, "আমেরিকা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং মিথ্যাচার করে ইরান সম্পর্কে ভুল ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ইরানি জনগণ সকল ষড়যন্ত্র ও নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দিয়ে আমেরিকার ‘গালে আরেকবার চপেটাঘাত করবে।"

No comments

Powered by Blogger.