‘আইনি প্রতিকার না পেয়ে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছি’ -নাজমুল হুদা

এক/এগারোর সময় দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি প্রতিকার না পেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্সের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এস কে সিনহা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো সচল করেছিলেন। নিছক আইনি প্রতিকার ছাড়া মামলা দায়েরের পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।
মানবজমিনের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এস কে সিনহা’র বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জোট রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন। 
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা’র বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে তার মাধ্যমে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তার আক্রোশের শিকার হয়েছি। এক/এগারোর সময় দায়ের করা মামলাগুলো হাইকোর্টে শুনানির পর আমি অব্যাহতি পাই। কিন্তু এস কে সিনহা আপিল বিভাগে আসার পর সেই মামলাগুলো সচল করেন।
সংবিধান অনুযায়ী লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ হলে শুনানি হবে।
কিন্তু তিনি এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। যে প্রধান বিচারপতি সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করবেন তিনি কীভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন করেন? এর প্রতিকার চেয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। গত আগস্টে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সেই রিট খারিজ করে দিয়ে বলেন যে, বিষয়টির একমাত্র এখতিয়ার আপিল বিভাগের। যে কারণে আমি কোনো প্রতিকার পেলাম না। আর প্রতিকার না পেয়েই আমি এস কে সিনহা’র বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আমার প্রতি তার আক্রোশের আরো কারণ রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে  বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের প্রতি আমার বিশেষ আস্থা ছিল। এটি তিনি পছন্দ করেন নি। তার আক্রোশটা এক সময় ঘুষ চাওয়ায় রূপ পায়।
কারও পরামর্শে মামলা করেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের পরামর্শে বা সরকারের আরো কাছাকাছি যাওয়ার জন্য আমি সিনহা’র বিরুদ্ধে এ মামলা করিনি। সরকারের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আগে থেকেই আছে। সিনহা’র বিরুদ্ধে মামলা করে নতুন করে সুসম্পর্কের কিছু নেই।
মামলা করার পর আমার প্রতি হুমকিও আসছে। একটি পক্ষ আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নির্বাচনী তৎপরতায় রাজনীতি চাঙ্গা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের অবস্থান সম্পর্কে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, আমরা বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে কাজ করছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ধরনের জোটই হোক না কেন সেই জোটেই বিএনএ থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোটের মিত্র শক্তি হিসেবে থাকতে চাই আমরা। সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে থাকার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। কারণ আমি মনে করি আমি দেশের জন্য যে কাজটা করতে চাই সেটি আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি আমার দল বা জোটের স্লোগান হচ্ছে- ‘সুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করা’। সুস্থ রাজনীতি বলতে এটিই বলতে চাচ্ছি যেখানে কোনো মুখোমুখি, সংঘাতময় ও সাংঘর্ষিক রাজনীতি থাকবে না। যেখানে প্রতিহিংসাপরায়ণ কোনো রাজনীতি হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করতে চাই।
তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে আমার নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে ৫৭টি আসন দাবি করেছি। তবে, এত আসন হয়তো পাবো না। কারণ আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের ওপরও চাপ রয়েছে। যদি দাবিকৃত আসন না পাই কিছুটা কমিয়ে ২৫টি আসন দাবি করবো আমরা। এর মধ্যে ১০/১৫টি আসনে আমাদের অতি গ্রহণযোগ্য প্রার্থী রয়েছেন যারা নির্বাচনে জিতে আসতে সক্ষম।
নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে। গত নির্বাচনে তারা যে ভুল করেছে আমার মনে হয় না তারা সেই ভুল এবারো করবে। সংসদে একটি আসন থাকলে আন্তর্জাতিকভাবেও কিছুটা ভাবমূর্তি থাকে। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা নির্বাচনে আসবে। তিনি বলেন, এখন যে বিষয়গুলো তাদের দাবি বা শর্ত যেমন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি, ইসি পুনর্গঠন, সহায়ক সরকার- এগুলো পরবর্তীতে তাদের ইস্যু হয়ে যাবে। এই ইস্যুগুলোর মাধ্যমেই তারা জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। এই ইস্যুগুলোর ওপর নির্ভর করেই তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি নেবে এবং তার ভিত্তিতেই তারা নির্বাচনে আসবে।
তিনি বলেন, এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচন হবে না। যদি ধরেও নেই যে, নির্বাচন পুরোপুরি সুষ্ঠু হয়নি তারপর তো  উপযুক্ত আসন পাওয়ার মতো গ্রহণযোগ্যতা বিএনপি’র আছে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার মতো অবস্থান তো তাদের থাকছে। আর ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা জামায়াতের ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত অবৈধ হলেও তাদের ভোট তো থাকছে। সেই ভোট তো বিএনপিরই  পাবার কথা।
বিএনপি হয়তো এই সুযোগটি কাজে লাগাবে। নাজমুল হুদা বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতৃত্বে দুটি বড় জোট নির্বাচনে নামলে যত কারচুপিই হোক না কেন এতে করে আমি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেখছি। তবে, আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসবে। কারণ কিছু বিষয়ে সমালোচনা থাকলেও আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
নাজমুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বারই বলে আসছেন যে, জনগণ ভোট দিলে তিনি থাকবেন, না হলে নয়। এর অর্থ হলো তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নেবেন। তার একথার প্রেক্ষিতেই বোঝা যায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তার আন্তরিকতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি দায়িত্ব নিয়েই বলছেন। তার কথা বিশ্বাস করবো না কেন? তার কথার ওপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.