‘দলিত-সমতল আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ জরুরি’

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, দলিত ও সমতল আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারি সংস্থার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘দলিত ও সমতলের আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সাংবাদিকদের এক ফেলোশিপ প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে। প্রতিটা মানুষ সে ধনী হোক, গরিব হোক, আদিবাসী হোক কিংবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হোক, মানুষ হিসাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা। এক কথায় সমাজে সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংবিধান প্রণয়নের সময়ও সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সংবিধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক এ উপদেষ্টা বলেন, সমতলের আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অধীন ‘স্পেশাল এফেয়ার্স ডিভিশন’ কাজ করে।
সেইসঙ্গে যেসব এলাকাতে দলিত ও সমতল আদিবাসীরা রয়েছে, সেসব এলাকার জেলা প্রশাসকদের সপ্রণোদিত হয়ে তাদের খোঁজখবর নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক ও ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ বোরহান কবীর বলেন, আমাদের গণমাধ্যম অনেক বেশি এখন রাজনৈতিক আক্রান্ত হয়ে গেছে। সব সংবাদপত্রই এখন রাজনীতিতে ভরাক্রান্ত। কিন্তু আমি মনে করি সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক কথাবার্তা ছাড়াও প্রান্তিক মানুষদের কথা শুনতে চান। গণমানুষের কথা শুনতে চান। সবাই এখন সমাজের নিম্নবিত্তদের কথা শুনতে চান, তাদের স্বপ্নের কথা জানতে চান। গণমাধ্যমের দায়িত্বই হচ্ছে ঐসব প্রান্তিক মানুষদের কথা তুলে ধরা। যেন তাদের অধিকার সংরক্ষিত হয়। তিনি আরো বলেন, দলিত ও সমতল আদিবাসীরা স্কুলে কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে না। এমনকি ভালো কোনো রেস্টুরেন্টেও বসে খেতে পারে না। সবাই এখন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’। এটা নিয়ে কেউই কোনো কথা বলে না। তাই দলিত ও সমতল আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় ‘বৈষম্য বিলোপ আইন’ পাসের ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের আরো সোচ্চার হতে আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়াও গণমাধ্যমে গবেষণামূলক কাজের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এ সময় একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নির্দিষ্ট কিছু দিবসে কিংবা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা না ঘটলে প্রান্তিক ও বঞ্চিত এ জনগোষ্ঠীর খবরাখবর সাধারণত গণমাধ্যমে আসে না। সাংবাদিকতা হচ্ছে চেলেঞ্জিং পেশা। এটা হচ্ছে বুদ্ধিজীবীদের পেশা। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠায় তাদেরই আগে এগিয়ে আসতে হবে। গাজী টেলিভিশন (জিটিভি)-র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আমাদেরই তৈরি। যতদিন না আমরা আমাদের নিজ নিজ তাড়না থেকে দলিত ও সমতল আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে না আসবো ততদিন এ সমাজে কিছুতেই বৈষম্যতা দূর হবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা দলিত ও সমতল আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষায় নিয়মিত রিপোর্টিং ও ফিচার প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়াও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমসমূহ জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারে গণমাধ্যমগুলোর মালিক ও নীতিনির্ধারণী মহলকে অনুরোধ জানান বক্তারা।
সাংবাদিকদের ফেলোশিপ প্রোগ্রামে হেক্স/ইপারের প্রতিনিধি মুজাহিদুল ইসলাম, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের গবেষণা ও পরিকল্পনা প্রধান অয়ন দেবনাথসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.