দেশে ৭৫ ভাগ বয়স্কদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে

বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিনজনের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। হৃদরোগের অন্যতম ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ, যা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।  হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি, যেখানে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৪০ জনই উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ৩৫ বছর বা তদূর্ধ্ব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, যার মধ্যে অর্ধেকই এ সম্পর্কে সচেতন নয়। ১লা অক্টোবর উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগের ওপর অর্ধদিবসব্যাপী একটি নীতিনির্ধারণী সম্মেলন শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি’। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যোগদান করেন আইসিডিডিআর,বি’র ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিসের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবদুল আলিম, এসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তফা জামান।  শ্রীলঙ্কার জাতীয় পলিসি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ডা. হর্ষ ডি সিলভা এই  অর্ধদিবসব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।  কোবরা-বিপিএস (কন্ট্রোল অব ব্লাডপ্রেশার অ্যান্ড রিস্ক এটেন্যুয়েশন-বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা) নামক ত্রিদেশীয় গবেষণার প্রধান গবেষক অধ্যাপক তাজিন জাফর, ডিউক-এনইউএস  হেলথ সার্ভিস ও সিস্টেম রিসার্স, এই ফোরামের সহ আয়োজক।
অধ্যাপক জাফর বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজনের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ইউরোপিয়ানদের তুলনায় দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ ৫ থেকে ৭ বছর আগে দেখা দেয়। কোবরা-বিপিএস গবেষণার আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ এলাকায় একটি উন্নত স্বাস্থ্য পদ্ধতির ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের সমন্বয়ে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এবং এই পদ্ধতিটি সাশ্রয়ী কিনা তা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কোবরা-বিপিএস বাংলাদেশের প্রধান গবেষক ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, কোবরা-বিপিএস পদ্ধতির বিশেষত্ব হলো এই ইন্টারভেনশনটি প্রচলিত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকদের মাধ্যমেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকগণ এই কোবরা-বিপিএস কৌশলের প্রতি তাদের উৎসাহ দেখিয়েছেন।
অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তফা জামান বলেন, উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস হলে সারাজীবন ব্যাপী চিকিৎসা নিতে হয় অন্যথায় রোগী ধীরে ধীরে শারীরিক অক্ষমতার দিকে যেতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে। এর জন্য একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন যেখানে রোগীদের জন্য স্বল্পমূল্যের ওষুধ নিশ্চিত করা, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী ও দরিদ্র রোগীরা যেন সারাজীবন চিকিৎসা চালিয়ে  যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে এমন একটি সহজ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে যা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসকদের সেবার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সম্মেলনে ডা. আলিম বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মৃত্যু এবং অসুস্থতার হার কমাতে বাংলাদেশ সরকার একটি পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো এবং অসংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যসেবাকে আরো উন্নত করা এই পরিকল্পনার অংশ। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, কোবরা-বিপিএস একটি সহজ পদ্ধতি যা বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় স্বল্প বিনিয়োগে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনডিপেন্ডেন্ট কমিশনের সহ সভাপতি ডা. সানিয়া নিশতার সকল স্তরের জনগণের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগের সেবা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.