ইশা আন্দোলনের মহাসমাবেশ: তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে

চরমোনাইর পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বর্তমান সংসদ বহাল রেখে এদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তফসিল ঘোষণার আগেই এই সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। গতকাল জুমার নামাজের পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয় মহাসমাবেশ থেকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে হয় সেটা ভাবতেও লজ্জা লাগে। স্বাধীনতার পরে এদেশে এখন পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে গলা টিপে ধরে খেয়েছে। তারা খুন-গুমের রাজনীতি কায়েম করেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা একের পর এক এটা করে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচিত ও অনির্বাচিত দুই ধরনের স্বৈরশাসক দেখেছেন। এখন তারা চায় সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দেশে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলছে। গত দশ বছরে তারা একটা নির্বাচনও সুষ্ঠু করতে পারেনি। তাই দেশের দুষমনদের দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চরমোনাই পীর বলেন, দেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নেবো না। ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে মানুষের মনে যে ভুল ধারণা রয়েছে সে সম্পর্কে বলতে চাই, দেশে ইসলাম কায়েম হলে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা এ লক্ষ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। তাদের বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য দলের কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফায়জুল করীম বলেন, এই ময়দানে ৭ই মার্চ শ্রদ্ধাবাজন শেখ সাহেব মানুষের মুক্তির কথা বলেছিলেন। কিন্তু দেশ কি আদৌ কোনো মুক্তি পেয়েছে? মানুষ কি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে? এদেশ থেকে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তার হিসেবের কোনো শেষ নেই। দেশটা খুন গুমে ভরে গেছে। তিনি কয়েকটি খাতে দুর্নীতির হিসেব তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় নির্মাণ ব্যয় থেকে আমাদের এখানে সড়ক, ব্রিজ, ফ্লাইওভার করতে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছিল বৈষম্য দূর করতে। এখন কি বৈষম্য দূর হয়েছে। আমি বলতে চাই যেই আওয়ামী লীগের উত্থান হয়েছিল গণানুষের জন্য। তারা সত্তর সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল অথচ আজ তারাই মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি গণমামুষের অধিকার ফিরিয়ে না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আরেকটি উত্থান ঘটাবে।
বর্তমান ইসির সমালোচনা করে ফায়জুল করীম বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একজন রোবট। তাকে সরকার যেভাবে চালাচ্ছে সেভাবেই তিনি চলছেন। রোবটকে যা সেট করে দেয়া হয় রোবট তাই করে, তিনিও তাই করছেন। এই অযোগ্য নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করে একটা কার্যকর ইসি গঠন করতে হবে।
ফায়জুল করীম আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার জোট করে, আপনাদের মানুষ আর ক্ষমতায় নিবে না। বর্তমান আওয়ামী লীগের অবস্থা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। আপনাদেরকে এদেশের মানুষ আর কখনো ক্ষমতায় বসাবে না। কয়েকদিন আগে ভারতের বিজেপির এক নেতা বাংলাদেশকে দখল করার হুমকি দিয়েছেন কিন্তু এই বিএনপি, আওয়ামী লীগ কেউ তার প্রতিবাদ করেনি। আপনারা ভারতের দালালি করতে পারেন, এদেশের মানুষ তাদের দালালি করেন না। এদেশের মানুষ আপনাদের চেহারা আর দেখতে চায় না।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই যেখানে ন্যায়-শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের অর্থে পদ্মা সেতু হবে। কিন্তু তিনি এটা বলতে পারেন না আমাদের দেশে যে জনসম্পদ, মেধাসম্পদ রয়েছে তাতে আর কারো কাছে আমরা হাত পাতবো না।
প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ইসলামী আন্দোলন মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে যখন গোটা দেশটা খুন, গুম ধর্ষণে ভরে গেছে। আওয়ামী লীগ বলছে দেশ উন্নয়নে করে ভরে ফেলছে। তারা উন্নয়ন মেলা বসিয়ে দেখাচ্ছে। সত্যিকার উন্নয়ন করলে মেলা করে দেখাতে হয় না। এই আওয়ামী লীগ এমন কোনো কাজ নেই, যা তারা করেননি। তারা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার উন্নয়ন করেছে। আপনারা ৫ই জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসবেন সেটা আমরা করতে দেবো না। এদেশের মানুষ সেটা হতে দিবে না।
প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল হুদা ফায়েজী বলেন, আমরা যদি দেশের জন্য ত্যাগ করতে পারি তাহলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই আমদেরকে সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
প্রেডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, আজকে আমাদের দেশের রাজনীতি দূষিত, কলুষিত হয়ে গেছে। যারা ভোট ডাকাতি করেছেন তাদের কোনো লজ্জা নেই। চারদিকে ভোট ডাকাতির উৎসব চলে। নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ আর হারে গণতন্ত্র।
প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, যারা এই দেশের মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে তারা আন্দোলনে ভেসে যাবে। মানুষ চায় শান্তিতে বসবাস করতে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সেটা কায়েম করতে পারছে না।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। মাঠেই জুমার নামাজ আদায় করেন অনেক নেতাকর্মী। আর নামাজের পরে পুরো উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.