লেখক ও সমাজকর্মীদের গ্রেপ্তারে ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া

ভারতের পুলিশ মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যে হানা দিয়ে ৫ জন খ্যাতনামা লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশ জুড়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন  বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনীতিবিদ সকলেই। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রোমিলা থাপার, অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক, সতীশ দেশপান্ডে, মায়া দারনাল প্রমুখ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ধৃত ৫ জনের মুক্তি দাবি জানিয়ে বুধবারই আবেদন করেছেন। বুধবার বিকেলেই এই আবেদনের শুনানী হওয়ার কথা। মঙ্গলবার হায়দরাবাদ থেকে কবি ভারভারা রাও, ফরিদাবাদ থেকে শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন অফ সিভিল লিবার্টিজ বা পিইউসিএলের প্রধান সুধা ভরদ্বাজ, দিল্লি থেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখা, মহারাষ্ট্র্রের থানে থেকে আইনজীবী  ও মানবাধিকার কর্মী অরুণ ফেরেরা এবং মুম্বই থেকে আইনজীবী ভেনন গঞ্জালভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই বামপন্থী হিসেবে সুপরিচিত। পুলিশের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে এদের যোগসাজশ পাওয়া গিয়েছে। এই গ্রেপ্তারের নিন্দা করে লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ঠিক যেন জরুরি অবস্থা। ওদের উচিত গোরক্ষার নামে যাঁরা গণপিটুনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এবং উস্কানি দিচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা। ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ টুইটারে গ্রেপ্তারের নিন্দা করে বলেছেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। দেশের স্বাধীন কন্ঠগুলো রুদ্ধ করার এই অভিযান বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের এখনই হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। সমাজবিজ্ঞানী রণবীর সমাদ্দার বলেছেন, এই গ্রেপ্তারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দেশজুড়ে এরকম ঘটনা আরও ঘটছে। রাজনীতি নিয়ে সুস্থ আলোচনার পরিবেশটাই নষ্ট হতে চলেছে। বিরুদ্ধে কথা বললেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মী রণজিৎ সুর বলেছেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই বিজেপি-আরএসএসের অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছিলেন। দেশজুড়ে দলিত-আদিবাসী এবং মুসলিমদের উপরে যে ভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করছিলেন এঁরা। গুজরাটের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণি, সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা নকুল সিংহ, সমাজকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ ও আরও অনেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন,  বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরাই সুর চড়িয়েছেন, তাঁদেরই পরিণতি ভয়ানক হয়েছে। ধৃত ৫ জনই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। এঁদের গ্রেপ্তারের একটাই উদ্দেশ্য, ভয় দেখানো। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে এভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি।  ৫ বিশিষ্ট লেখক ও সমাজকর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির বদলে ভারতের উচিত মত প্রকাশ, সভা সমিতি গঠন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করা। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্বজ্জনদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি এবং কাজকর্মের জন্যই কি তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে?

No comments

Powered by Blogger.