কাশ্মিরে আবারও সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা ভারতের

কাশ্মিরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করছে ভারত সরকার। রমজান মাস উপলক্ষে একতরফাভাবে ঘোষিত ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি শেষে এ অভিযান শুরু হচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর টুইটকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা খবরটি জানিয়েছে।
কাশ্মিরে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত। কেউ কেউ আবার কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার পক্ষে। ইতিহাস পরিক্রমায় ক্রমেই সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইসলামীকিকরণ হয়েছে। এখন সেখানকার বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর মধ্যে হিজবুল মুজাহিদীন সবথেকে সক্রিয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মিরের জাতিমুক্তি আন্দোলনকে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী তৎপরতার থেকে আলাদা করে শনাক্ত করে না। সন্দেহভাজন জঙ্গি নাম দিয়ে বহু বিদ্রোহীর পাশাপাশি বেসামরিকদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে। কাশ্মির প্রশ্নে সমগ্র ভারতীয় স্টাবলিশমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সেখানকার সমস্যাকে ‘বিচ্ছিন্নতা আর জঙ্গিবাদের’ সমস্যা আকারে দেখা হয়ে থাকে। কাশ্মিরের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা অভিযান চালিয়ে থাকে ভারতীয় বাহিনী। তবে রমজান উপলক্ষে এক মাসের অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছিল তারা। রমজান শেষ হওয়ার পর আবারও অভিযান শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার।
রবিবার (১৭ জুন) টুইটারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্রবিরতি পালন করলেও জঙ্গিরা অনবরত বেসামরিক লোকজন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে গেছে। এতে হতাহত হয়েছে মানুষ।’
পুলিশের দাবি, গত ৩০ দিনে ছয় বেসামরিক, ৯ নিরাপত্তাকর্মী ও ২০ জনেরও বেশি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে মারা গেছে। এ সহিংসতা চলার মধ্যে প্রখ্যাত সাংবাদিক সুজাত বুখারীকে রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হয়।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজ্য বিজেপি’র (ভারতীয় জনতা পার্টি) মুখ্য মুখপাত্র সুনীল শেঠী বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম জঙ্গি ও পাকিস্তানের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। আমাদের বন্দুক বন্ধ ছিল, কিন্তু জঙ্গিরা প্রতিদিন হামলা চালিয়ে গেছে। অস্ত্রবিরতি অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। সরকারের পক্ষে অস্ত্রবিরতি অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। রাস্তায় এতো রক্তপাতের পরও আমরা তা চালিয়ে যেতে পারি না।’
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবথেকে সামরিকায়িত অঞ্চলগুলোর একটি কাশ্মির। জননিরাপত্তা আইনের নামে সেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী ধারাবাহিক আটক-গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে।  ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে তখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় ৮ হাজার থেকে ২০ হাজারের মতো মানুষকে আটক করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.