ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করলো মন্দির কমিটি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজিরের স্বাক্ষী হলো পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গোবরডাঙা শহর। ঈদের নামাজ আয়োজনের জন্য যুতসই স্থান পাচ্ছিলেন না গোবরডাঙার গড়পাড়া এলাকার মুসলিমরা। ঈদগাহ কোথায় করবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। তাদের এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্থানীয় যুবকেরা। মন্দির সংলগ্ন মাঠটি তারা নিজ দায়িত্বে পরিস্কার করে দেন।
কলকাতার এই সময় এ উঠে এসেছে ঘটনাটি। এতে বলা হয়, কয়েক মাস আগেই গোবরডাঙা-সহ উত্তর ২৪ পরগনার অনেক জায়গা গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ওই সংঘর্ষে প্রচুর ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়, চলে লুঠপাট। শনিবার ঈদের দিনের এই ঘটনা সেই অতীতকে ভুলিয়ে দিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গড়পাড়ায় ঈদগাহ থাকলেও সেখানে নামাজ পড়ার কোনও জায়গা নেই। একেবারেই ছোট মসজিদ। শনিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ঈদগাহে নামাজ পড়ার সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন মসজিদ কমিটির কর্তাদের কাছে। মসজিদ কমিটি ঈদগাহর স্থান সঙ্কটের কথা জানান সমীর নন্দী, শঙ্কর দত্ত, বিশ্বজিত দাসের মতো স্থানীয় যুবকদের ।  তারা মসজিদ কমিটিকে বলেন, ‘কোনও চিন্তা করবেন না। আমরা আছি।’ ওই এলাকায় একটি ক্লাবের পাশেই রয়েছে দুর্গামন্দির। দুর্গা পুজা কমিটির সভাপতি সমীর নন্দী ও তার বাকিরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন, মন্দির সংলগ্ন মাঠটি ঈদের জামাত আয়োজনের উপযোগী করে দেবেন। যেমন কথা, তেমন কাজ। তারা মন্দির লাগোয়া মাঠ পরিষ্কার করে দেন তাড়াতাড়ি। তার পর সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। স্থানীয় যুবকদের এই ভূমিকায় সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন যারপরনাই খুশি।
গড়পাড়ার মসজিদ কমিটির সভাপতি আবু বক্কর বলেন, ‘এলাকার ঈদগাহটি খুব ছোট। সেখানে বসে এক সঙ্গে নামাজ পড়ার জায়গা ছিল না। ফলে সমস্যা হচ্ছিল। অনেক দূরে যেতে হতো নামাজ পড়তে। স্থানীয় হিন্দু ভাইরা সেই সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন তাদের মন্দির সংলগ্ন মাঠের জায়গা ছেড়ে দিয়ে। খুব ভালো লাগছে। এই সহাবস্থান নিঃসন্দেহে নজির হয়ে থাকবে।’
দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি সমীর নন্দী বলেন, ‘আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধুমাত্র ঈদগাহে জায়গা না থাকার কারণে খুশির ঈদে নমাজ পড়া বন্ধ থাকবে, মানুষ হিসেবে এটা আমরা মেনে নিতে পারিনি। তাই তাদের সুযোগ করে দিতে পেরে আনন্দই হচ্ছে। এই ভাবে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের সুখে দুঃখে এগিয়ে এলেই সাম্প্রদায়িক হানাহানি বন্ধ হয়ে যাবে।’
খবরের শেষে বলা হয়, সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থান হিসেবে গোবরডাঙার নাম রয়েছে। স্থানীয় ক্লাবের পাশে যেমনি দুর্গামন্দির কমিটির জায়গা রয়েছে, তেমনি তার পাশেই আছে মসজিদ। আবার একটু দূরেই গির্জাও আছে। ভীন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এখানে সম্প্রীতি নজরে পড়ার মতো।

No comments

Powered by Blogger.