অভিনেত্রীর মন্তব্যে চীনে ‘ঋতুস্রাব’ নিয়ে শোরগোল

আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য একটি প্রশ্ন আছে। আপনার ঋতুস্রাব বা মাসিক বা পিরিয়ড চলার সময় কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে থাকার কথা আপনি কল্পনা করতে পারেন? বেশিরভাগ নারীই মনে করেন, এই সময়টায় কাজে বা স্কুলে যাওয়াটাই ঢের কঠিন। বিছানায় এপাশ ওপাশ করা কিংবা স্বস্তিকর খাবার খেয়েই সময়টা পার করতে ইচ্ছে করে। এবার চিন্তা করুন, ঋতুস্রাব চলাকালে আপনার গায়ে বরফ শীতল পানি ঢেলে দেয়া হচ্ছে। আর সেই ঘটনা আবার সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে টিভিতে। আরো চিন্তা করুন, এই ঘটনাটা এমন জায়গায় হচ্ছে যেই দেশে ট্যাম্পন বা ন্যাপকিন ব্যবহৃত হয় খুব কম।
গেল সপ্তাহে ঠিক এই ধরনেরই একটি পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল চীনের অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলবেবিকে, যার আসল নাম হলো ইয়ুং উইং।
‘কিপ রানিং’ নামে একটি টিভি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। রিয়েলিটি শো ঘরানার এই অনুষ্ঠানে সব প্রতিযোগীকেই বারবার পানিতে ভিজতে হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু দর্শক লক্ষ্য করলেন, অ্যাঞ্জেলবেবিকে মাত্র একবার ভিজতে হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গ করেন। কেউ বলছিলেন, তাকে ‘বিশেষ সুবিধা’ দেয়া হচ্ছে। এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘কিপ রানিং অনুষ্ঠান আপনার জন্য নয়। বাসায় যান।’ কেউ কেউ আবার বরফ শীতল পানি মারার একটি দৃশ্যে এই অভিনেত্রীর ‘মাত্রাতিরিক্ত’ ও বিরক্তিকর মুখাবয়ব নিয়ে হাসাহাসি করেছেন।
গত রোববার এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী তার ৮ কোটি ৫০ লাখ অনুসারীকে জানান কেন এমনটা আসলে ঘটেছিল। তিনি বলেন, ওই অনুষ্ঠান চলাকালে তিনি ছিলেন পিরিয়ডের প্রথম দিনে। তার ওই পোস্ট ৫২ হাজারেরও বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে। মন্তব্য এসেছে ৬০ হাজারেরও বেশি।
তিনি লিখেন, ‘ওইদিন ছিল আমার পিরিয়ডের প্রথম দিন। আমি খুবই অস্বস্তিকর বোধ করছিলাম। আমি কিন্তু একবারও বলিনি যে, আমি পানিতে নামতে পারবো না। তবে ওই চেয়ারে বসে থাকাটা মজার কিছু ছিল না।’ চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবোতে তিনি আরো লিখেন, ‘আমি খুবই ঠাণ্ডা অনুভব করছিলাম ও ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ আপনি জানেন না এই পানি থেকে কোন কথা বলাবলি শুরু হয়।’ ব্যঙ্গের শিকার হওয়া নিয়ে তার ভাষ্য, ‘আমি যেটা করতে পেরেছিলাম তা হলো এসব নিষ্ঠুর কথা হজম করা এবং সেসবকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করা।’
তার এই কাহিনী তুলে ধরেছে বিবিসি। বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চায়না হলো এমন দেশ যেখানে ঋতুস্রাব বা ন্যাপকিনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে মানুষ কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে। তা সত্ত্বেও, অ্যাঞ্জেলবেবির ওই পোস্টে অনেক মন্তব্যদাতা তার প্রতি সমর্থন জানান। এর আগেও একবার ওই কঠোর নিয়মকানুনের অনুষ্ঠানটিতে তিনি লড়েছিলেন। মাঝখানে তার গর্ভে আসে সন্তান। তারপরও তিনি ফের ফিরে যান কিপ রানিং শোতে। এ নিয়েও কেউ কেউ তার প্রশংসা করেছেন।
তার ওই পোস্টে মন্তব্য হিসেবে একজন লিখেছেন, ‘ঋতুস্রাব চলার সময় মেয়েদের যন্ত্রণা শুধু মেয়েরাই বুঝবে। অথচ আমরা মেয়েরাই অন্য কারও মধ্যে পরিপূর্ণতা খোঁজার চেষ্টা করি। হৃদয়ে আরেকটু বেশি ভালোবাসা ও একটু কম কালিমা থাকা দরকার আপনার।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এটা আসলেই সহজ নয়। কেউ যখন পিরিয়ডে থাকেন, তখন খুবই কষ্ট হয়। মাঝেমাঝে এটা এতটাই যন্ত্রণাদায়ক যে, আপনি কী করছেন তা নিয়েই আপনার সন্দেহ হবে। আর এই অবস্থায় ওই পানিতে নামার মানে হলো আপনাকে আরো কষ্ট সহ্য করতে হবে। আমি হলে এটা সামলাতে পারতাম না।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এই সমাজ নারীদের প্রতি একটু বেশিই নির্মম। ঘুরে দাঁড়ান, প্রিয়।’
তবে কেউ কেউ অ্যাঞ্জেলবেবির সমালোচনাও করেছেন। একজন সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমরা কীভাবে জানবো যে আদৌ তিনি পিরিয়ডে ছিলেন কিনা? তাকে এত সহজে বিশ্বাস করা কেন?’ আরেকজন প্রশ্ন করেছেন, ‘এত অসুবিধা বোধ করলে তিনি অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন কেন, পানিতেই বা গেলেন কেন?’
তবে ঋতুস্রাবের ইস্যু নিয়ে চীনে এই প্রথম যে শোরগোল শুরু হলো তা নয়। ২০১৬ সালের অলিম্পিকে দেশটির তারকা সাঁতারু ফু ইয়ুয়ানহুই বলেন, পিরিয়ড থাকায় তিনি শক্তভাবে পারফর্ম করতে পারেন নি এবং তিনি ক্লান্ত বোধ করছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.