ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনিদের বা নাকাবা দিবস ও জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। শুধুমাত্র গাজায় ইসরাইলি সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়ই বিক্ষোভ করেছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭০০’র বেশি। এর মধ্যে ইসরাইলি বাহিনীর উন্মুক্তভাবে চালানো গুলিতে আহত হয়েছেন ৪৫০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী। এ খবর দিয়েছে দ্য হারেৎস ও আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিদের ৭০তম ‘নাকাবা দিবস’ (বিপর্যয়) বার্ষিকী উপলক্ষে কয়েক সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ দ্য গ্রেট মার্চ অফ রিটার্নে অংশগ্রহণ করেছে প্রায় ৪০ হাজার বিক্ষোভকারী। তারা অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সংলগ্ন সীমান্তে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই সীমান্ত বেষ্টনী ভেঙে ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের দমাতে উন্মুক্তভাবে গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও আগুনে বোমা ছুড়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
গ্রেট মার্চ অফ রিটার্ন
আজ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিদের ৭০তম নাকাবা দিবস। ১৯৪৮ সালে এইদিনে তাদের জন্মভূমি (বর্তমান ইসরাইল) থেকে গাজায় বিতাড়িত করা হয়েছিল লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে। গাজার ৭০ শতাংশের বেশি জনগণই বিতাড়িত শরণার্থীদের বংশধর। ওই ঘটনাকে ফিলিস্তিনিরা নাকাবা বা বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। প্রতি বছরই দিনটিকে নাকাবা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে তারা। এই বছর ৩০শে মার্চ থেকে ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার দাবিতে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সংলগ্ন সীমান্তে টানা বিক্ষোভ করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিক্ষোভ হয়েছে গতকাল। ইসরাইলি সীমান্তের কাছে বিক্ষোভ করেছে প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে অনেকে সীমান্ত বেষ্টনী অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়েছেন। যদিও ইসরাইল বিক্ষোভের আগেই সীমান্ত থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে লিফলেট ছড়িয়ে দিয়েছিল। তবে বিশাল এই বিক্ষোভের আয়োজনকারীরাও লিফলেটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে এই প্রচেষ্টা সফল করে তোলার আহ্বান জানায়।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ৩০শে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনীর হাতে বিক্ষোভরত অবস্থায় সাংবাদিকসহ মারা গেছেন কমপক্ষে ৯০ জন। আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে গতকালকের বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ জন। আহত হয়েছেন, ১ হাজার ৭০০ মানুষের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবারের বিক্ষোভে নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজনের বয়স ১৮ বছরের কম। এর মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। অন্যদিকে ১ হাজার ৭০৩ জন আহত ব্যক্তির মধ্যে, অন্তত ১২২ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক, ৪৪ জন নারী ও ১১ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এর মধ্যে সরাসরি ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন ৭৭২ জন ও গ্যাস হামলায় আহত হয়েছেন ৭৩৭ জন। স্থানীয় সাংবাদিক মারাম হুমাইদ বলেন, সোমবারের বিক্ষোভে নজিরবিহীন মানুষ অংশ নিয়েছে। বিগত কোনো বিক্ষোভেই এত পরিমাণ মানুষ অংশ নেয়নি।
এদিকে, বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনীর গুলি চালানোর প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মিশর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে।
মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর
এদিকে, আরব বিশ্বের নীরবতার মধ্য দিয়েই আজ জেরুজালেমে স্থানান্তর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। পশ্চিমা শক্তিধর অন্যান্য দেশ ও প্রতিষ্ঠানের এতে আপত্তি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে এর মধ্যদিয়ে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দিচ্ছেন। দিনটিকে ইসরাইলের ইহুদিরা জেরুজালেম দিবস হিসেবে উদযাপন করছে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব নেতাদের সমালোচনা সত্ত্বেও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পেলো জেরুজালেম। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন দূতাবাসের ফলক থেকে পর্দা সরিয়ে এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামেপর মেয়ে ইভানকা ট্রামপ ও জামাতা জারেড কুশনার ও ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট রিওভেন রিভলিনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
কুশনার তার বক্তব্যে বলেন, অবশেষে এই সত্যের স্বীকৃতি মিলেছে যে, জেরুজালেমই ইসরাইলের রাজধানী। তিনি বলেন, এখানে আমাদের দূতাবাস স্থানান্তর করে আমরা আবারো বিশ্বের কাছে প্রমাণ করলাম যে, যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করা যায়।
দূতাবাস স্থানান্তর নিয়ে ট্রামপ বলেন, ইসরাইল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ও তাদের নিজেদের রাজধানী ঠিক করার অধিকার আছে। ট্রামপ আরো বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা করতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে পদক্ষেপটির কট্টর সমালোচনা করেছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ বলেন, এটি একটি মহা লজ্জার দিন। এক টুইটে তিনি বলেন, ইসরাইলি প্রশাসন অগণিত ফিলিস্তিনিদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে বিক্ষোভ করার জন্য ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। অন্যদিকে ট্রামপ অবৈধ দূতাবাস স্থানান্তর উদযাপন করে ও তার আরব সহযোগীরা অন্যদিকে মনোনিবেশ করছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওল্ড সিটি হিসেবে পরিচিত জেরুজালেমে নেমে আসে কয়েক হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে পুলিশ। ১৪ই মে’কে ইসরাইল জেরুজালেম দিবস হিসেবে পালন করে বার্ষিক ভিত্তিতে। ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়ার পর থেকেই তারা এ দিবসটি পালন করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও জামাতা জারেড কুশনারসহ একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল আগেভাগেই ইসরাইলে পৌঁছান।
ওল্ড সিটিতে এতিমদের একটি সংগঠনের প্রধান আফাফ আল দাজানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর করানোর ফলে অবশ্যই আমরা দুর্ভোগের শিকার হবো। এখনই বসতি স্থাপনকারীদের উপস্থিতির কারণে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। দূতাবাস স্থানান্তর এই অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলবে।

No comments

Powered by Blogger.