আজ খুলছে উত্তর সিলেটের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার by মিনহাজ উদ্দিন

উৎসবের আমেজে বর্ষ বরণের পাশাপাশি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের আনন্দে মাতোয়ারা সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব-জাফলং এলাকা। বাংলা নববর্ষের প্রথমদিনে সিলেটের সীমান্ত জনপদখ্যাত  গোয়াইনঘাটে আজ যাত্রা শুরু হচ্ছে আরও এক নবদিগন্তের। উদ্বোধন হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত জাফলং সেতুর। সেতুটির উদ্বোধনের সঙ্গে সাথে উপজেলা সদর গোয়াইনঘাটের সাথে জাফলংয়ের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর সিলেটের ৩টি উপজেলার সাথে সহজতর যোগাযোগ, পর্যটন সম্ভাবনার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়ও নবদ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। উত্তর সিলেটের সর্ব বৃহৎ ও মেগা উন্নয়ন প্রকল্প জাফলং ব্রীজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় বেয়ে আসা প্রমত্তা পিয়াইন নদীর জাফলং খেয়াঘাট এলাকায় এলজিডি’র তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৯  কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬০ মিটার দৈর্ঘ্য এই ব্রিজটি উদ্বোধন হওয়ার ফলে উপজেলা সদর গোয়াইনঘাট, জেলা সদরের সাথে উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের যোগাযোগ দূরত্ব কমে আসা এবং সহজতর হবে। উক্ত ব্রিজ নির্মাণে স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলেও এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যাটি সমাধানে আশ্বাস ছাড়া বাস্তবায়নে উদ্যোগী ছিলনা কেই। ২০০৮ সালের শেষের দিকে এ ব্রিজ বাস্তবায়ন প্রকল্প গ্রহণে সর্বশেষ উদ্যোগী হন বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। তিনি তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভা, সভা সমাবেশে উক্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকাবসিকে আশ্বস্ত করেন। তৎকালীন সময়ে জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশের ডকুমেন্টারি তৃণমূল একুশে সংলাপ অনুষ্ঠানেও এই ব্রিজ নির্মাণে আওয়ামী লীগের উদ্যোগের বিষয়টি ইমরান আহমদের হয়ে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া হেলাল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে চতুর্থদফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ জাফলং ব্রিজ প্রকল্প উন্নয়নে সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হন। উক্ত প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যান সাংসদ ইমরান আহমদ। শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক দৌড়ঝাঁপ। এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নিরলস পরিশ্রম করে উক্ত প্রকল্প দাঁড় করান তিনি এবং ২০১৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাফলং ব্রিজ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সরকারের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এ সময়ে কাজ হয়ে চলিত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। খেয়া পারাপারসহ জনদুর্ভোগ লাগবে সম্প্রতি জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জন্য ব্রিজটি খুলেও দেয়া হয়। আজ বাংলা নববর্ষের প্রথমদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত মেঘা উন্নয়নপ্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সিলেট-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফখরুল ইসলাম জানান, নির্মাণ কাজ শেষ করে ইতিপর্বে ব্রিজটি আমাদের কাছে হ্যান্ড অভার করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। উদ্বোধনের জন্যও সকল প্রস্তুতি ইতিপুর্বে শেষ হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক আবদুল মালিক জানান, জাফলং ব্রিজটি শুধু ব্রিজই নয়, একটি ইতিহাসের মাইলফলকও। এই ব্রিজ উত্তর সিলেটের যোগাযোগ, পর্যটন সম্ভাবনা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নবদ্বারের উন্মোচন করেছে। আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদসহ সরকারের কাছে গোয়াইনঘাটবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জাফলং পিয়াইন পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগনেতা আবদুল মালিক জানান, জাফলং ব্রিজ অত্রাঞ্চলের সহজতর যোগাযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পর্যটন, ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি আবাদ উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। এখন থেকে জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ সবক‘টি পিকনিক স্পটে পর্যটকরাও সহজে যেতে পারবেন। ব্রিজটির বাস্তবায়নের ফলে তামাবিল স্থল বন্দর, জাফলং, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে গোয়াইনঘাটসহ গোটা উত্তর সিলেট আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলো। স্থানীয় সাংসদ জননেতা ইমরান আহমদের প্রচেষ্টায় এ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আমাদের দল আওয়ামী লীগ তথা নৌকার বিজয়ে এ ব্রিজ অবশ্যই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু জানান, জাফলং ব্রিজ এখন ইতিহাসের নতুন একটি অধ্যায়, অত্রাঞ্চলের মানুষজন, যানবাহন সহজে যাতায়াতের পাশাপাশি পর্যটন, ব্যবসা বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ ব্রিজ। গোয়াইনঘাটের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ৫নং আলীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া হেলাল জানান, এক সময় জাফলং ব্রিজ স্বপ্ন ছিলো, আর এখন তা বাস্তব এবং নতুন ইতিহাস। এই ব্রিজ বাস্তবায়নের ধারা আবারও প্রমাণ হলো আমাদের এমপি ইমরান আহমদ জনগণকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখান না, যা বলেন তা বাস্তবায়ন করেন। আমার বিশ্বাস এ উন্নয়ন প্রকল্পসহ অত্রাঞ্চলের অভূতপুর্ব উন্নয়ন বাস্তবায়ন করায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার বিবেকবান জনগণ আবারও জননেতা ইমরান আহমদকে নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এ ব্যাপারে কথা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য জননেতা ইমরান আহমদ বলেন, আমি কখনই জনসাধারণকে মিথ্যা উন্নয়ন প্রকল্পের আশ্বাস দেই না। কেননা আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি নয়, কাজে বিশ্বাস করে। আমি অত্রাঞ্চলের মানুষের ভোটে বার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। তাদের পবিত্র আমানত নিয়ে এমপি হয়ে তাদের সঙ্গে কখনই প্রতারণা করতে পারি না। আজকের জাফলং ব্রিজ স্বপ্নই নয় বাস্তব। এ ব্রিজের সুফল গুটা উপজেলাবাসী সহ উত্তর সিলেটের সবক’টি উপজেলাবাসী ভোগ করবেন, উপকৃত হবেন। এখানকার পর্যটন এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও এগিয়ে যাবে। সুদৃঢ় হবে। ব্রিজটি বাস্তবায়ন হওয়ায় দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সহজেই এই উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.