আজ বর্ষবরণে জল-স্থল আকাশে কঠোর নিরাপত্তা

আজ পহেলা বৈশাখ। সূর্যোদয়ের মাধ্যমে শুরু হলো নতুন বাংলা সন ১৪২৫। বর্ণিল সাজে চিরায়ত বাংলার বর্ণাঢ্য আয়োজনে এ নতুন বছরকে বরণ করছে বাঙ্গালীরা। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউনেস্কো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রমনাসহ পুরো রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ, র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুধু স্থল বা জল নয়, আকাশেও জোরদার করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। বর্ষবরণ নিরাপদ করতে রাজধানীর অনুষ্ঠানস্থল ও রাস্তায় রাস্তায় থাকছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহুমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরসহ পানিতে থাকছে নৌ-পুলিশ। রমনা ও মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘিরে আকাশে র‌্যাব সদস্যরা চক্কর দেবে হেলিকপ্টারে। পর্যবেক্ষণ করা হবে পরিস্থিতি। নারী হয়রানি রোধে হাতিরঝিল ও রমনায় থাকছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রা ও ছায়ানটের বর্ষবরণ হবে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে। থাকছে পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট টিম, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, গোয়েন্দা সদস্য ও মোবাইল কোর্ট। যান চলাচল বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বহু সড়কে। এদিকে গতকাল রমনার বটমূলে র‌্যাবের বিভিন্ন প্রস্তুতির কথা জানান এলিট ফোর্সটির মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমদ। এ সময় তিনি বলেন, দেশবাসী বর্ষবরণের জন্য উন্মুখ। আগামীকাল উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে দেশব্যাপী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে র‌্যাব। উৎসবের প্রাণকেন্দ্র রমনা হলেও গত কয়েক বছর ধরে রাজধানীর হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবর, উত্তরাসহ বিভিন্নস্থানে অনুষ্ঠান হয়। বেশি জায়গায় অনুষ্ঠান হলে নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ বেড়ে গেলেও রমনায় জনসমাগমটা কম হয় না। জনগণের উৎসব আনন্দমুখর করতে আমরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণে প্রস্তুত। রমনাসহ অন্যান্য জায়গায় সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিশ্চিত করবে র‌্যাব।
তিনি আরো জানান, রমনায় প্রতিবার র‌্যাবের কন্ট্রোলরুম থাকলেও এবার প্রথমবারের মতো হাতিরঝিলেও তা খোলা হবে। রমনা পার্ক এলাকায় পেট্রোল করা হবে। রমনা পার্ক ও মঙ্গল শোভাযাত্রা এলাকায় আকাশ থেকে হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। পেট্রোল টিমের পাশাপাশি থাকবে র‌্যাবের চেকপোস্ট। তিনি আরো বলেন, প্রথমবারের মতো র‌্যাব শিশু ও বৃদ্ধদের বিশ্রামের জন্য রমনা ও হাতিরঝিলে বৈশাখী লাউঞ্জ করছে। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো অনুষ্ঠানস্থল নজরদারিতে রয়েছে।
অবশ্য নববর্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল আশেপাশের বস্তি ও আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় এবং সন্দেহভাজন ও জঙ্গিগোষ্ঠীর উপর নজরদারি থাকছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীজুড়ে পুলিশের নিরাপত্তা বলয়: এ উপলক্ষে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আরো ব্যাপক ও বহুমুখী নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, একই দিন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শবে মেরাজ থাকায় রাজধানীর উন্মুক্ত স্থানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সবাইকে ভেন্যু ছাড়তে হবে। তবে রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠান ৭টা পর্যন্ত চলবে। আর উন্মুক্ত স্থানে বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান ঘিরে থাকছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি অনুষ্ঠান স্থলে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হবে আর্চওয়ে দিয়ে তল্লাশির মাধ্যমে। ওয়াচ টাওয়ারে পর্যবেক্ষণ করা হবে পরিস্থিতি। ধূমপান ও ইভটিজিং রোধে মাঠে থাকছে মোবাইল কোর্ট। মুখে নয়, মুখোশ রাখতে হবে হাতে। বাজবে না ভুভুজেলা। পুরো রাজধানীতে থাকছে পুলিশের সমন্বিত ও সুশৃঙ্খল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ সদস্যরা। ইতিমধ্যে ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপ করা হয়েছে বহু ভেন্যু। কোনো ধাতব বস্তু দা, নেইল কাটার, ব্লেড ও দাহ্য পদার্থ যেমন দিয়াশলাই ইত্যাদি বহনে নিষেধ রয়েছে। দমকল বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্স এবং বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যে মাঝপথে কেউ ঢুকতে পারবে না।
রমনা পার্ক ও সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট: মূল অনুষ্ঠানস্থল রমনা পার্কে শুধু প্রবেশের জন্য তিনটি গেট উন্মুক্ত থাকবে। তা হলো, রমনা রেস্তরাঁ গেট, অস্তাচল গেট (শিশু পার্কের বিপরীতে) ও অরুণোদয় গেট (সুগন্ধার বিপরীতে)। দর্শনার্থীদের বের হওয়ার দু’টি গেট হলো, উত্তরায়ণ গেট (মিন্টু রোডের পশ্চিম প্রান্ত) ও বৈশাখী গেট (আইইবির বিপরীতে)। একই সঙ্গে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য খোলা থাকবে শ্যামলীমা গেট (কাকরাইল মসজিদের দক্ষিণে) ও স্টার গেট (মৎস্য ভবন ক্রসিং)। অপর দিকে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য ব্যবহার হবে ৫টি গেট। প্রবেশ পথগুলো হলো, শিখা চিরন্তন গেট, বাংলা একাডেমির বিপরীতে নতুন গেট ও তিন নেতার মাজার সংলগ্ন গেট। বের হওয়ার জন্য খোলা থাকবে কালী মন্দির গেট ও আইইবি গেট। তবে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি ও ছবিরহাট গেট দু’টি বন্ধ থাকবে।
আজ বন্ধ থাকবে যেসব রাস্তা: পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক ও সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান ও পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং রবীন্দ্র সরোবরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। বন্ধ থাকবে বাংলা মটর-রূপসী বাংলা-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর রোড, রূপসী বাংলা-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-কদম ফোয়ারা রোড, মৎস্য ভবন-শাহবাগ-কাঁটাবন রোড, পলাশী-শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট ক্রসিং রোড, বকশী বাজার-শহীদ মিনার-টিএসসি রোড, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং-দোয়েল চত্বর রোড এবং নীলক্ষেত-টিএসসি রোড।
বিকল্প রোড: তবে যান চলাচলের জন্য কিছু বিকল্প রোড হিসেবে আজ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এগুলো হচ্ছে, মিরপুর রোড-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউ মার্কেট-আজিমপুর-বকশী বাজার-চাঁনখার পুল-গুলিস্তান রোড, রাসেল স্কোয়ার-সোনারগাঁও-রেইনবো-মগবাজার-মালিবাগ-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান রোড, মহাখালী-সাতরাস্তা-মগবাজার-কাকরাইল-রাজমনি-ইউবিএল-গুলিস্তান রোড, ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলা মটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-খিলগাঁও রোড এবং ফার্মগেট-সোনারগাঁও-বাংলা মটর-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমনি-পল্টন-মতিঝিল রোড।
রমনা পার্ক ও সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান কেন্দ্রিক ডাইভারশন পয়েন্টগুলো: পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানস্থল রমনা পার্ক ও সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানমুখী যানবাহনগুলোকে অন্যপথ দিয়ে ঘুরে যেতে বেশ কিছু পয়েন্ট নির্ধারণ করছে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ। তা হলো, সোনারগাঁও ক্রসিং, বাংলা মটর ক্রসিং, পরিবাগ গ্যাপ, নেভাল চীফ গলি, সাকুরার গলি, পুলিশ ভবন ক্রসিং, সবজি বাগান ক্রসিং, মিন্টো রোড পূর্ব প্রান্ত, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং, সুগন্ধা ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, শিল্পকলা একাডেমি গলি, দুদকের গলি, কার্পেট গলি, মৎস্য ভবন ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, জিরো পয়েন্ট ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, রোমানা চত্বর ক্রসিং, বকশী বাজার ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, কাঁটাবন ক্রসিং, আজিজ সুপার মার্কেট ক্রসিং, প্রশাসন একাডেমি গলি ও শাহবাগ ক্রসিং।
গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা: আজ গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যে সড়কগুলোর এক লেন ব্যবহার করা যাবে সে সড়কগুলো হলো, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল রোড (উত্তর হতে আগত), পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড (উত্তর হতে আগত), আবদুল গণি রোড (পূর্ব-দক্ষিণ দিকের গাড়িসমূহ), কার্জন হল হতে বঙ্গ বাজার হয়ে ফুলবাড়িয়া (দক্ষিণ দিকের গাড়িসমূহ), মৎস্য ভবন থেকে কার্পেট গলি (আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িসমূহ), শিল্পকলা একাডেমি গলি (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িসমূহ), সুগন্ধা হতে অফিসার্স ক্লাব (ভিআইপি ও মিডিয়ার গাড়িসমূহ) ও কাঁটাবন হতে নীলক্ষেত হয়ে পলাশী পর্যন্ত (দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের গাড়িসমূহ)

No comments

Powered by Blogger.