পরিচ্ছন্নতায় রেকর্ড গড়েছে ঢাকা, স্বীকৃতির অপেক্ষা

ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ৮টা। নগর ভবন এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই নাই। হাতে ঝাঁড়ু, মাথায় টুপি, পরনে সাদা গেঞ্জি ও হাতে ব্যাজ পরে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সবাই ঢাকাকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে নাম লেখাতে চায়। নগর ভবনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছাড়াও বাদ যায়নি ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, জাতীয় স্কাউট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), ফায়ার সার্ভিস। সম্মিলিতভাবে সবাই প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির মাধ্যমে রেকর্ড গড়তে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের আমন্ত্রণে হাজির হয়েছিলেন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগর ভবন, ফুলবাড়িয়া, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে আগতদের রেজিস্ট্রেশন করে একটি প্রতিষ্ঠান। সকাল ৭টা থেকে দুটি বুথে ৮০টি কাউন্টারের মাধ্যমে একযোগে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়া বুথে ৫৫টি কাউন্টার ও নগর ভবনের সামনে ২৫টি কাউন্টার ছিল। হিসাব অনুযায়ী সেখানে ১৫ হাজার ৩১৩ জন রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর বাইরে আরো কয়েক হাজার লোক রয়েছে যারা রেজিস্ট্রেশন করেনি ও করার সুযোগ পায়নি। সিটি করপোরেশন দাবি করছে সেখানে সব মিলিয়ে অন্তত লাখের কাছাকাছি লোক জমায়েত হয়েছিল।
স্বচ্ছ ঢাকা গড়তে এ আয়োজন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সহযোগিতা করেছে ডেটল। আতশবাজি, জাতীয় সংগীতের পরে বেলা পৌনে ১১টায় মেয়র সাঈদ খোকন ডেটল পরিচ্ছন্ন ঢাকার উদ্বোধন করেন। পরে ১ মিনিট প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ঝাড়ু দেয়া হয়। এসময় সেখানে মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম দস্তগীর, সানজিদা খানম, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, ডিএমপি কমিশানার আছাদুজ্জামন মিয়া, আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুরাদ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রেকিট বেনজিকারের মার্কেটিং ডিরেক্টর সৈয়দ তানজিম রেজওয়ান, জিটিভির মার্কেটিং ডিরেক্টের আমান আশরাফ ফায়েজ, চিত্রনায়ক রিয়াজ, ডিএনসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক প্রমুখ। এসময় অতিথিরা মেয়রের এই উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এই শহর আমাদের। এই শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আজ বিশ্ব রেকর্ড তৈরি হলো। অনুষ্ঠান শেষে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমরা হয়তো পুরো ঢাকাকে আজ পরিষ্কার করতে পারি নাই। তবে এখান থেকে একটা সচেতনতা তৈরি হবে। কারণ মন সুন্দর যার, সে রাখে দেশ পরিষ্কার। আমার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন তারা সুন্দর মনের মানুষ। মেয়র বলেন, ঢাকাবাসী বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। আর তার সাক্ষী হয়ে থাকলেন আপনারা। এই রেকর্ডটি আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করলাম।
উল্লেখ্য, ভারতের গুজরাটে ২০১৭ সালের ২৮ মে বদোধারা শহরে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন পাঁচ হাজার ৫৮ জন কর্মী নিয়ে এক কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কার করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে নাম ওঠায়। শহরের একতা ডান্ডিয়া বাজার রোড পরিষ্কার করে এ রেকর্ড গড়া হয়। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ার পরিকল্পনা ডিএসসিসির। কর্মসূচি সফল করতে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.