রামগঞ্জে শিশু নুশরাত হত্যা: ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ আলমারিতে রাখে ঘাতক

রামগঞ্জে চাঞ্চল্যকর শিশু নুশরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম রুবেল গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। রোববার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় রামগঞ্জ থানা পুলিশ শাহ আলম রুবেলকে আটক করতে সক্ষম হয়। গতকাল সকালে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার আ.স.ম মাহতাব উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, ২৩শে মার্চ দুপুরের আগে একই বাড়ির সিরাজ মিয়ার ছেলে শাহ আলম রুবেল বাড়ির সম্পর্কিত  ভাতিজি নুশরাত জাহান নিশুকে আইসক্রিম খাওয়ার কথা বলে ঘরে ডেকে নেয়। ঐদিনই নুশরাতকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ব্যাগে ভরে ঘরের স্টিলের আলমিরার উপর রেখে দেয়। সন্ধ্যার পর রুবেলের বন্ধু স্থানীয় নোয়াগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী বোরহানকে দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দুজন ব্যাগভর্তি লাশ নিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া ঠাকুরবাড়ির ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। ২৬শে মার্চ সকাল ১১টায় তার লাশ উদ্ধার করে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। রাতেই নিহত নুশরাতের মা রেহানা বেগম রামগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়। পরে লাশের সঙ্গে ব্যাগের লিফলেট প্রচারণা চালায় পুলিশ। বিষয়টি সিএনজিচালক মো. রাকিব হোসেন জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসেন রানাকে ঘটনাটি তার অজ্ঞাতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করলে পুলিশে ঘটনাটি খুলে বলা হয়। পুলিশ সিএনজি চালকের সূত্র ধরে আটক করে শাহ আলম রুবেলের বন্ধু বোরহান উদ্দিনকে। পরে পুনরায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবশেষে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে শাহ আলম রুবেলকে আটক করতে সক্ষম হয়।
সূত্র জানায়, গত ২৩শে মার্চ পশ্চিম নোয়াগাঁও গ্রামের কালা মিস্ত্রি বাড়ির প্রবাসী এরশাদ মিয়ার মাদরাসা পড়ুয়া ৮ বছরের শিশুকন্যা নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের তিনদিন পর ২৬শে মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় পার্শ্ববর্তী কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপাড়া গ্রামের ঠাকুর বাড়ির সামনের ব্রিজের নিচ থেকে শিশু নুশরাতের ব্যাগভর্তি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে রামগঞ্জ থানা পুলিশ।
এদিকে শিশু নুশরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল হোতা রুবেল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় উপজেলাব্যাপী আনন্দের বন্যা দেখা দেয়। রামগঞ্জ থানার সামনে তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় লোকজন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শিশু নুশরাতকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরদিন নুশরাতের মা রেহানা বেগম রামগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলা ও লাশের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ব্যাগের সূত্র ধরে তদন্ত চালায়। তদন্তের এক পর্যায়ে বের হয়ে আসে মূল ঘটনা।
রুবেলের বন্ধু ওসমান, বাবা মো. সিরাজ মিয়া, মা রিভা বেগম, দুই বোন রুপা ও নিপা, সিএনজি চালক রাকিব ও ঢাকার সদরঘাট থেকে গার্মেন্টসের ম্যানেজার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও মূল হত্যাকারী রুবেল ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।

No comments

Powered by Blogger.