ইসরাইলিদের পক্ষেই কথা বললেন সৌদি যুবরাজ

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনবাসী যখন ফুঁসছে, ফিলিস্তিনি কিশোর-যুবকদের বুকের রক্তে লাল হচ্ছে মাটি, তখন ইসরাইলিদের পক্ষেই কথা বললেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এর মধ্য দিয়ে আরো প্রকাশ্যে চলে এসেছে যে, সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। উল্লেখ্য, জেরুজালেমকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সে অনুযায়ী, তেল আবিব থেকে তাদের দূতাবাস স্থানান্তর হতে যাচ্ছে জেরুজালেমে। কিন্তু জীবন দিতে প্রস্তুত ফিলিস্তিনিরা। তারা জেরুজালেমের অধিকার ছাড়তে নারাজ। তাই গত কয়েকদিনে জেরুজালেমের আশপাশে সমবেত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনি। তাদের ওপর ড্রোন ব্যবহার করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে। গুলি করা হচ্ছে। এতে কমপক্ষে ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেখানে পরিস্থিতি যখন এমন বিস্ফোরণোন্মুখ, তখন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিককে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তা প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। এতে তিনি বলেছেন, নিজেদের দেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বসবাসের অধিকার আছে ইসরাইলিদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি উভয়ের তাদের নিজেদের ভূখন্ডে বসবাসের অধিকার আছে। তবে আমাদেরকে সবার জন্য একটি টেকসই শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে। উল্লেখ্য, পবিত্র ইসলাম ধর্মের সূতিকাগার ও ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র দুটি মসজিদ রয়েছে সৌদি আরবে। ইসরাইলকে কিন্তু সৌদি আরব স্বীকৃতি দেয় না। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের সময় ইসরাইলিরা আরবের যেসব ভূখন্ড দখল করেছে তাকে কেন্দ্র করেই সম্পর্ক ঝুলে আছে। মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, জেরুজালেমে পবিত্র আল আকসা মসজিদের ভবিষ্যত ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের বিষয়ে আমাদের দর্শীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগ রয়েছে। আমার কাছে এটাই সব। অন্য কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। উল্লেখ্য, মোহাম্মদ বিন সালমান এখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। তার এ সফরের উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ইরানের প্রভাবকে খর্ব করার প্রচেষ্টায় সমর্থন দেয়া। ওদিকে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে ক্রমাগত বাড়ছে উত্তেজনা। এতে চারদিকে কথা ছড়িয়ে পড়েছে যে, অভিন্ন স্বার্থের জন্য সৌদি আরব ও ইসরাইল এক হয়ে কাজ করতে পারে ইরানের বিরুদ্ধে। তারা দুটি দেশই ইরানকে অভিন্ন এক হুমকি হিসেবে দেখছে। তাই প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের রয়েছে বিপুল পরিমাণ অভিন্ন স্বার্থ। তাই যদি শান্তি স্থাপিত হয় তাহলে তা হবে ইসরাইল ও উপসাগরীয় সহযোগিতা বিষয়ক দেশগুলোর জন্য বৃহত্তর স্বার্থের। এখানে উল্লেখ্য, ইসরাইলের জন্য গত মাসে প্রথমবারের মতো নিজের বিমানঘাঁটি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেছে সৌদি আরব। সেখানে ইসরাইলের বাণিজ্যিক ফ্লাইট অবতরণ করছে। এটাকে ঐতিহাসিক এক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন ইসরাইলি এক কর্মকর্তা। তলে তলে যে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরাইলি মন্ত্রীপরিষদ যোগাযোগ করে যাচ্ছিল তা প্রকাশ হয় গত নভেম্বরে। এটাকে সবচেয়ে গোপন এক সমঝোতা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বিষয়টি এখনও অস্বীকার করে রিয়াদ। ওদিকে গত ডিসেম্বরে যখন জেরুজালেমকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প রাজধানীর স্বীকৃতি দেন তার নিন্দা জানায় সৌদি আরব।

No comments

Powered by Blogger.