ট্রাম্পের বিতর্কিত শুল্ক আরোপ, বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতা উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর বিতর্কিত শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এতে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সে সম্ভাবনার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় সময় বৃহ¯পতিবার ই¯পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে একটি আদেশপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই আদেশ কার্যকর হতে চলেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বেশকিছু দেশ। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে ঘোষণার চেয়ে কিছুটা নরম মনোভাব দেখিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এক্ষেত্রে কানাডকা এ মেক্সিকোকে শুল্ক ছাড় দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র  অন্যায্য বাণিজ্যের শিকার। আর এই শুল্ক আরোপ, দেশটির শিল্পের উন্নতি ঘটাবে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশে প্রচুর ই¯পাত আসুক। তবে আমরা এটাও চাই যে, সেগুলো ন্যায্য উপায়ে আসুক। আমরা আমাদের শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে চাই।’ আন্তর্জাতিক পরিম-ল তার এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। আদেশপত্রে স্বাক্ষর করার আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, কানাডা, মেক্সিকো ও আরো কিছু দেশ ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনার পরিণতি সম্বন্ধে সতর্ক করেছে ও পাল্টা জবাবের হুমকিও দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’র মতন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৃহ¯পতিবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের ন্যায়সঙ্গত জবাব দেয়া হবে। তবে তিনি এও বলেছেন যে, এমন যুদ্ধে সকল পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি কি আদতেই এমনটা করতে চলেছেন কি না তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ  ট্রাম্পের নিজ দলের অনেকেও এই শুল্ক আরোপ পরিকল্পনার বিরোধীতা করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে জানান, তিনি  এই শুল্ক আইন বাতিল করার জন্য একটি একটি আইন তৈরি করছেন। হাউজ ¯িপকার পল রায়ান জানান, তিনিও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরোধী। এদিকে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ), চীন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়া।  ইইউ’র কিছু সদস্য দেশ- যেমন জার্মানি- যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ই¯পাত রপ্তানি করে। অন্যদিকে, এই শুল্ক আরোপের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া এখন প্রতি বছর গড়ে ১১০ কোটি ডলার ক্ষতির শিকার হবে।
ইইউ’র বাণিজ্য বিষয়ক কমিশনার সেসিলিয়া ম্যালমস্ট্রোয়েম এক টুইটে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইইউ’কে শুল্ক ছাড় দেয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ইইউ পূর্বে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের জবাবে ইইউ’তে আমদানিকৃত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল।  ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য মারি বলেন্স, বাণিজ্য যুদ্ধে সবাই হারে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় ফ্রান্স খুশি নয়। এদিকে, বৃটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে তাদের ইইউ মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.