ঢাকায় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ ছাত্রলীগের: কোটার বিরুদ্ধে অন্যরকম প্রতিবাদ

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সরা দেশে গলায় শিক্ষা সনদ ঝুলিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করতে গেলে ঢাকায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বনী ইয়ামিনকে কর্মসূচি থেকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ছাত্রলীগ। এদিকে আন্দোলনকারীরা পূর্ব ঘোষিত ২৯শে মার্চের নাগরিক সমাবেশ পরিবর্তন করে ৩১শে মার্চে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা কোটা বাতিল চাচ্ছি না, আমরা চাই যৌক্তিক সংস্কার। যা ১০ শতাংশের বেশি হওয়া কোনো ভাবেই দেশের জন্য সুখকর নয়। আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির যৌক্তিকতা বুঝে তা মেনে নিবেন। সেজন্য আমরা অহিংস সব কর্মসূচি বেছে নিয়েছি।
কেন্দ্রীয়ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম এহতেশাম আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বনী ইয়ামিনকে কর্মসূচি থেকে মধুর ক্যান্টিনে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী। মধুর ক্যান্টিনের গোল ঘরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় ওই শিক্ষার্থীকে প্রায় ১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ বিষয়ে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একজনকে কর্মসূচি থেকে তুলে আনার সময় আমরা অনেকে পিছনে পিছনে মধুুর ক্যান্টিনে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এ সময় কর্মসূচিও দ্রুত শেষ করতে নির্দেশনা দেয় ছাত্রলীগ।’ তবে বনী ইয়ামিনকে তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘কাউকে তুলে আনা হয়নি। ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে।’ এদিকে একজনকে তুলে নেয়া ও হুমকির পরও কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে এ দিনের কর্মসূচি সংক্ষেপ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা গলায় শিক্ষা সনদ ঝুলিয়ে ঝাড়ু হাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট ও রাস্তাসমূহ পরিষ্কার করেন।
এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোটা সংস্কারের দাবি শিক্ষা সনদ গলায় ঝুলিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া, সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।

No comments

Powered by Blogger.