‘ফাও’ বালুর কারবারে পকেট ভারি পাউবো কর্মকর্তার

বালু সরকারি। ব্যবসা ব্যক্তির। সরকারি টাকায় নদী খননে পাওয়া বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরছে তারা। আশুগঞ্জে ‘ফাও’ বালুর কারবারে গড়ে উঠেছে পঞ্চাশেরও বেশি লোকের একটি সিন্ডিকেট। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী আরো অনেকেই রয়েছেন এই দলে। বিপুল পরিমাণ বালু মজুদ করা হচ্ছে রেলওয়ের জায়গায়। তাও অবৈধভাবে। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চর-সোনারামপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে খনন কাজ শুরু হয় মার্চ মাসের শুরুতে। তার আগেই বালুর ব্যবসার সব পাকাপাকি হয়। বালু ব্যবসায় জড়িত একাধিক সূত্র জানিয়েছে-নরসিংদী জেলায় বাড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তার নিয়োজিত এজেন্ট জাকির হোসেন আশুগঞ্জে এসে বালু বিক্রির সব ঠিকঠাক করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তার পক্ষে বালুর দাম বাবদ লাখলাখ টাকা গ্রহণ করছে সে। ওই জায়গায় নদী খননে ৬/৭ কোটি ঘনফুট বালু উঠতে পারে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। প্রতিফুট বালুর মূল্য ধরা হয়েছে ২ টাকা। সেই হিসেবে বিনা পুঁজির এই ব্যবসায় ১৩/১৪ কোটি টাকা পকেটে ঢুকবে সিন্ডিকেট সদস্যদের। এদিকে এই বালু মজুদ করা হচ্ছে আশুগঞ্জ রেলসেতুর কাছে খাদ্যশস্য সাইলোর পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে। জায়গাটি কৃষি কাজ করার কথা বলে বন্দোবস্ত আনা হয়েছে। বন্দোবস্ত গ্রহণকারীরাও রয়েছে বালু ব্যবসার দলে। স্থানীয় লোকজন বলছেন- বালুর বিশাল স্তূপ আর বালু বোঝাই ট্রাকের চলাচলের কারণে মেঘনা নদীর পূর্বতীর, আশুগঞ্জ খাদ্যশস্য সাইলো, মেঘনা নদীতে দুইটি রেলসেতু এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর ক্ষতি হতে পারে। তথ্যানুসারে, আশুগঞ্জ স্টেশন এলাকায় চর-চারতলা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে মো. জালাল মিয়া, আবু তাহেরের ছেলে শামসুল হক মুন্সির নামে পয়েন্ট ৬২ একর এবং একই গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে মো. ফিরোজ মিয়া ও গফুর মিয়ার ছেলে দীন ইসলামের নামে ২.৮৫ একর ভূমি কৃষি কাজের জন্য সম্প্রতি বন্দোবস্ত দেয় রেলওয়ে। নদী খননের লাখলাখ ফুট বালু মজুদ হচ্ছে সেখানে। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি বালু মজুদ করার জন্যে স্কেভেটর ও পে-লোডার দিয়ে মাটি খনন করে পাড় নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেট। এরপর রেলওয়ের সহকারী এস্টেট অফিসার, ফিল্ড কানুনগো ও আমিন সেখানে এসে বাধা দেন। চলতি মাসের পহেলা মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ডে সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তাকে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী একটি চিঠি দিয়ে অবৈধভাবে ওই জায়গায় প্রবেশ করে মাটি ভরাটের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু এই বাধা অগ্রাহ্য করেই সেখানে বালুর স্তূপ করে ব্যবসা চালানো হচ্ছে। রেলওয়ে থেকে চিঠি দেয়া হয় কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। আর স্থানীয় লোকজন জানান- এখানে খনন কাজ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। ‘জলঢাকা’ নামের একটি ড্রেজার নদী খনন করছে এখানে। রেলওয়ে থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহায়তাও চাওয়া হয় এ স্থানে বালুর মজুদ বন্ধে। এই চিঠি পাওয়ার পর সহায়তার পরিবর্তে স্থানীয় চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আশুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন খন্দকার নিজেই বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। তিনিই এখন বালু ব্যবসার হর্তাকর্তা। এ ব্যাপারে স্থানীয় থানা পুলিশও নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন রেলওয়ের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা। কৃষিকাজের জন্য বন্দোবস্ত গ্রহণকারীদের একজন সামসুল হক মুন্সি বলেন-রেলের জায়গা বন্দোবস্ত এনেছি আমরা কয়েকজন। কিন্তু আমি বালুর ব্যবসাতে নেই। তিনি জানান স্থানীয় চরচাতলা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকার-ই এই বালুর ব্যবসা করছেন। তার সঙ্গে  রয়েছেন মাসুদ মেম্বার, দীন ইসলাম মেম্বার, মজিবুর, জয়নাল মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কবিরের ভাই মিজানসহ ৩০/৪০ জন। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম তালুকদার জানান- এ ব্যাপারে রেলওয়ের কোনো চিঠি তিনি পাননি। তিনি বলেন রেলওয়ের স্টেট ম্যাজিস্ট্রেট আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন। তারা চাইলে আমরা সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি বাইন হীরা বলেন- বিষয়টি জেনে জানাতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে পত্র ও মৌখিকভাবে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা আমাদেরকে কোনো জবাব দেয়নি। ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বলেন, বালু কোথাও না কোথাও রাখতে হবে। আমরা আলোচনা করেই এখানে রাখছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও অনুমতি রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.