৮ ঘন্টা কি ঘুমাতেই হবে?

ঘুমের সঙ্গে আমাদের শরীরের ভালো-মন্দের যে একটা সম্পর্ক রয়েছে সে বিষয়ে তো সবারই জানা আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে যে বাড়তে পারে দুশ্চিন্তা, সে বিষয়ে কি জানা আছে? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে মস্তিষ্ক ঠিক মতো আরাম না পেলে ব্রেনের অন্দরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। যে কারণে একদিকে যেমন খারাপ চিন্তা ঘাড়ে ছেপে বসে, তেমনি স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি লেভেলও বাড়তে শুরু করে। ফলে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। বিংহেমটন ইউনিভার্সিটির দুই গবেষক এই বিষকর গবেষণাটি চালানোর সময় লক্ষ করেছিলেন যে যারা প্রতিদিন কম করে ৮ ঘন্টা ঘুমোন, তাদের নেগেটিভ চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে জীবনের রাস্তায় এগিয়ে যেতে কোনো সমস্যাই হয় না। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ আরাম পাওয়ার কারণে ব্রেন পাওয়ার এতটা বেড়ে যায় যে দুশ্চিন্তা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। কিন্তু একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে ঠিক মতো না ঘুমলে। সেক্ষেত্রে খারাপ চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া একেবারেই সম্ভব হয় না। ফলে স্ট্রেস লেভেল ক্রমশ বাড়তে থাকে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে স্ট্রেস হলো এমন একটি বিষ, যা ধীরে ধীরে শরীর এবং মনকে একেবারে ঝাঁঝরা করে দেয়। ফলে মানসিক অবসাদের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে বর্তমান সময় যে যে মারণ রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার বেশিরভাগের সঙ্গেই স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই বন্ধু সুস্থভাবে বাঁচতে ৮ ঘন্টার কম সময় ঘুমবেন না যেন! এখন প্রশ্ন হলো নানা কারণে যাদের ঠিক মতো ঘুম আসতে চায় না বা ৮ ঘন্টার আগেই ঘুম ভেঙে যায়, তাদের সুস্থ থাকার উপায় কী? বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কিছু খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর হতে একেবারেই সময় লাগে না। তাই যাদের ঠিক মতো ঘুম হয় না, তাদের বাকি প্রবন্ধে চোখ রাখতেই হবে! সাধারণত যে যে খাবারগুলোকে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে সহজেই ঘুমের কোটা পূরণ করা সম্ভব, সেগুলো হলো...
১. আখরোট : এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে রয়েছে "ট্রাইপটোফেন" নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা সেরাটোনিন এবং মোলাটোনিনের মতো স্লিপ হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার মতো সমস্যা কমে যেতে সময়ই লাগে। তাই তো যারা রাতের প্যাঁচা, তাদের রোজের ডেয়েটে আখরোটের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট!
২. বাদাম : ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ এই খাবরটি নিয়মিত এক মুঠো করে খাওয়া শুরু করলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর হতে সময়ই লাগে না। আসলে এই খনিজটি শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখাতে শুরু করে যে নিমেষে ঘুম এসে যায়। জার্নাল অব অর্থোমলিকিউলার মেডিসিন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে একদিকে যেমন হাড়ের স্বাস্থ্যের অবনটি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ঠিক মতো ঘুমও আসতে চায় না। তাই শরীরে কোনো সময় যাতে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
৩. পনির : শুনতে অবাক লাগলেও একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ডিনারে নিয়মিত পনির বা যেকোনো ধরনের দুগ্ধজাত খাবার, যেমন দই, দুধ বা চিজ খাওয়া শুরু করলে দারুণ ঘুম হয়। আসলে প্রায় প্রতিটি ডেয়ারি প্রডাক্টেই প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত থাকে ট্রাইপটোফেন, যা মেলাটোনিন হরমেনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. লেটুস শাক : স্বাদের কারণে বঙ্গ খাদ্যরসিকদের মধ্যে এই শাকটির বেশ কদর রয়েছে। তা আপনি খান তো লেটুস শাক? সেকি খান না! আরে ভাই এই ভুল কাজটি আর যেন করবেন না। পরিবর্তে আজ থেকেই সপ্তাহে ৩-৪ দিন লেটুস শাক খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার সমস্যা কমতে সময়ই লাগবে না। আসলে এই শকটিতে রয়েছে ল্যাকটুকেরিয়াম নামক একটি উপাদান, যা নিমেষে ঘুম আসতে সাহায্য করে। তাই এবার থেকে শুতে যাওয়ার আগে ৩-৪ টে লেটুস পতা একটা কাপ পানিতে ফেলে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। সময় হয়ে গেলে আঁচটা বন্ধ করে পানিটা পান করেই শুয়ে পরুন। এমনটা নিয়মিত করতে থাকলে দারুণ উপকার পাবেন।
৫. মাছ : সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র অনুসারে নিয়মিত মাছ খাওয়া শুরু করলে শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি দূর হয়। এই দুই পুষ্টিকর উপাদান, মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. চেরির জুস : স্ট্রেস এবং অন্যান্য নানা কারণে রাতের ঘুম উড়েছে? এদিকে এমন পরস্থিতিতে কি করবেন তাও ভেবে উঠতে পারছেন না? কোনো চিন্তা নেই বন্ধু! আজ থেকেই শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস করে চেরির জুস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ঘুম আসতে সময়ই লাগবে না। আসলে চিরির অন্দরেও রয়েছে এমন অনেক উপকারি উপাদান যা মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। তাই তো ইনসমনিয়ায় ভুগতে থাকা রোগীদের নিয়মিত চেরির রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

No comments

Powered by Blogger.