প্রধান শিক্ষককে পেটাল যুবলীগ নেতা, বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন

শিক্ষক নিয়োগ কেন্দ্র করে বরগুনার আমতলী খেকুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপনকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আব্দুস সোবাহান লিটনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি রোববার আমতলী পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে। এর আগে এ ঘটনায় শনিবার রাতে আমতলী থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এক আসামিকে গ্রেফতারও করেছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, গত শনিবার মুঠোফোনে খেকুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপনকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আমতলী উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সোবাহান লিটন। সম্প্রতি এ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারী পদে নিয়োগের জন্য আবেদন জমা নেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক বিধিমোতাবেক ওই পদে নিয়োগের কথা বলেন। কিন্তু সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে চাপ প্রয়োগ করেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় সভাপতি মোবাইল ফোনে তার ভাই সোহাগ, সান্টু, সোহরাব হোসেন ও শিমন শরীফকে সেখানে ডেকে এনে প্রধান শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখান। একপর্যায়ে তার কাছ থেকে জোরপূর্বক চাবি ছিনিয়ে নিয়ে বিদ্যালয়ের  ডেক্সটেবিলের ড্রয়ার খুলতে গেলে প্রধান শিক্ষক এতে বাধা দেন। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষককে কিলঘুষি ও  লাথি মেরে তার পরিধেও জামা ছিঁড়ে ফেলেন। প্রধান শিক্ষককে আহত করে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটন ওই ড্রয়ারে সংরক্ষিত ৮৬ হাজার টাকা ও তার ভাই সান্টু প্রধান শিক্ষকের পকেটে থাকা ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় যান। পরে প্রধান শিক্ষকের চিৎকারে স্কুলের দফতরি জামাল ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (অব) আ. মান্নান ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করেন। আমতলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমি ঘটনা শুনে পুলিশ নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে আহত প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপনকে আমতলী থানায় নিয়ে আসি। বিদ্যালয়ের দফতরি জামাল হোসেন বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটন ও তার ২ ভাই প্রধান শিক্ষককে কক্ষে  আটকিয়ে মেরে জামা ছিঁড়ে ফেলেছে। প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপন বলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটন তার পছন্দের প্রার্থীর  কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় সভাপতি ও তার ২ ভাই আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে আমার পরিধেও জামা ছিঁড়ে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটন বিদ্যালয়ের ডেক্সটেবিলের ড্রয়ারে সংরক্ষিত থাকা ৮৬ হাজার টাকা ও তার ভাই সান্টু আমার পকেটে থাকা ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটনের কাছে মুঠোফোনে (০১৭১২৯২৪৩০৮) জানতে বারবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিপ করেননি। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম মহিউদ্দিন স্বপন বাদী হয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সোবাহান লিটনসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। আমতলী থানার ওসি মো. শহিদউল্যাহ বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সোহারাব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে রোববার সকালে আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল, উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন, নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে স্মারকলিপি পেশ ও উপজেলার সবল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে।

No comments

Powered by Blogger.