যৌন কেলেঙ্কারিতে বিলাতের রাজনীতিবিদরাও

যৌন কেলেঙ্কারির ছোঁয়া লেগেছে বৃটিশ রাজনীতিতেও। মন্ত্রী পর্যায়ের কয়েকজন, এমপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র মধ্যে। তিনি তার মন্ত্রী পরিষদে রদবদলও আনতে পারেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওদিকে বিরোধী লেবার দলনেতা জেরেমি করবিন অভিযুক্তদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, কমন্স সেক্রেটারি ক্যারোলাইনা এডমন্ডসনকে দিয়ে নিজের জন্য সেক্স টয় কেনাতেন বৃটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী মার্ক গারনিয়ের।
এমনটা ফরেস্ট দাবি করার পর তা স্বীকার করেছেন গারনিয়ের। শুধু তা-ই নয়। তিনি ওই সেক্রেটারিকে ডাকতেন ‘সুগার টিটস’ বা ‘মিষ্টি ছুড়ি’ নামে। এ সবই স্বীকার করেছেন তিনি। লন্ডনের দ্য মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়্যার ফরেস্ট থেকে নির্বাচিত ৫৩ বছর বয়সী কমন্স সেক্রেটারি ক্যারোলাইন এডমন্ডসন বলেছেন, তাকে নগদ অর্থ দিতেন বাণিজ্যমন্ত্রী গারনিয়ের। আর সোহো’তে সেক্স শপের বাইরে অপেক্ষায় থাকতেন তিনি। ওই দোকানের ভেতরে প্রবেশ করতেন এডমন্ডসন। তিনি মন্ত্রী গারনিয়েরের জন্য কিনে আনতেন সেক্স টয়। কিনেছেন দুটি ‘ভাইব্রেটর’। এডমন্ডসন আরো ফাঁস করে দিয়েছেন যে, ওই সময়কার পররাষ্ট্র বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি ছিলেন গারনিয়ের। তিনি এডমন্ডসনকে বলেছেন, ওই দুটি সেক্স টয়ের একটি তার স্ত্রীর জন্য। অন্যটি হলো তার নিজের নির্বাচনী আসন ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে একজন নারী সহকারীর জন্য। রোববার এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর বৃটেনজুড়ে হইচই সৃষ্টি হয়েছে। মুখে মুখে ঘুরছে এ কাহিনী। এ বিষয়ে মন্ত্রী গারনিয়ের বলেছেন, এ অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি না। আমি অতটা অসৎ হতে যাবো না। উল্লেখ্য, মন্ত্রী গারনিয়ের তিন সন্তানের পিতা। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। তা কিন্তু তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, ওই সেক্স টয় দুটি তিনি কিনেছিলেন বড়দিনের দুপুরের খাবার পরে। আর টিভি শো ‘গ্যাভিন অ্যান্ড স্ট্যাসি’ নিয়ে রসালো আলোপচারিতার সময় তিনি এডমন্ডসনকে সুগার টিটস বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এরপরই তারা দুজন আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এডমন্ডসন। তিনি বলেছেন, মন্ত্রী গারনিয়ের তাকে কমন্সের একটি বারের ভেতর সোহো’ সেক্স শপে গিয়ে কেনাকাটার প্রস্তাব দেন। সে এক রাতের কথা। তারপর পরের দিন তিনি ‘আমাকে বলেন চলো এটা প্রাকটিস করি’। ওদিকে যৌন কেলেঙ্কারি ঘিরে ধরেছে ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টির আরেক সিনিয়র এমপি স্টিফেন ক্রাব’কে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে একটি চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে তার কাছে এসেছিলেন ১৯ বছর বয়সী এক যুবতী। তিনি তাকে অশালীন এসএমএস দিয়েছিলেন। এ অভিযোগ স্বীকার করেছেন ৪৪ বছর বয়সী এই মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বোকামি করে তিনি ওই এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। তবে ওই যুবতীর সঙ্গে তার কোনো শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। তিনি বলেছেন, ওই যুবতীর সঙ্গে কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারা একসঙ্গে কফি পান করেছেন। একবার কমন্স বারে ওয়াইন পান করেছেন। তার ভাষায়, আমাদের মধ্যে এসএমএস বিনিময় হয়েছে। সেক্স নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে তা সিরিয়াস পরিণতির দিকে যায়নি। ওই যুবতীর এক বন্ধু ডেইলি টেলিগ্রাফকে বলেছেন, দু’সন্তানের পিতা ক্রাব যে এসএমএস পাঠিয়েছিলেন তা তিনি দেখেছেন। তার একটিতে তিনি ‘আমার বান্ধবীর সঙ্গে সেক্স করতে চেয়েছেন’। এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্রাব। বলেছেন, এমন যৌন উত্তেজক চ্যাটিংয়ের জন্য আমি দুঃখিত। যুক্তরাষ্ট্রে হলিউড প্রযোজক হারভে উইন্সটেনের যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে কৌতুক করেছেন বৃটেনের পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গভ। তিনি ওই কেলেঙ্কারি নিয়ে সামঞ্জস্যহীন মন্তব্য করায় বাধ্য হয়েছেন ক্ষমা চাইতে। এর পরই বৃটেনের রাজনীতিকদের এই যৌন অপরাধের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। হারভে উইন্সটেনের যৌন কেলেঙ্কারির খবর ছড়িয়ে পড়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বৃটেনে তার ছোঁয়া লেগেছে। এর ফলে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র মধ্যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি মনে করছেন, ওয়েস্টমিনস্টারে যৌন কেলেঙ্কারির কারণে তাকে মন্ত্রিসভা নতুন করে জরুরি ভিত্তিতে সাজাতে হতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে অবগত এমন সূত্র দ্য সান অন সানডে’কে বলেছেন, কিছু এমপি এমন সব অভিযোগে অভিযুক্ত এটাতো গত কয়েক বছর ধরেই ওপেন সিক্রেট। তাই রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে। শুক্রবার এমনটা বলেছেন তার একজন মুখপাত্রও। ওদিকে চুপ করে বসে নেই বিরোধী লেবার দলও। দল নেতা শনিবার এক বক্তব্যে সতর্ক করেছেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যেসব এমপির বিরুদ্ধে এমন যৌন অপরাধ ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.