চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অপহরণ অতঃপর...

চাকরির ভাইভা দিতে গিয়ে রাজধানীতে অপহরণের শিকার হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদয়ন স্কুলের সামনে ফুলার রোডে তাকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। অপহৃত শিক্ষার্থীর নাম সোহেল রানা। তিনি সরকারি তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র। অপহরণকারী তার কাছ থেকে এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়।
দাবি করে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ। একইসঙ্গে কাছে থাকা নগদ অর্থসহ মোবাইল ফোন ও ম্যানিবাগ ছিনিয়ে নেয়। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।
অপহৃতের স্বজনরা জানান, ফিন্যান্স বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সোহেলের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। বর্তমানে মগবাজার এলাকার নয়তলা ভবনের একটি মেসে থাকতেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি চাকরির খোঁজ করছিলেন। বিভিন্ন সময় তাই বিডিজবস্‌সহ বিভিন্ন চাকরির সাইটে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেন। ক’দিন আগে পল্টনের তোপখানা রোডের ট্রপিকানা টাওয়ারের ১৫ তলায় মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে ফোন দেয়। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সোহানুর রহমান জানান, ২৯ তারিখে তার মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে। তাকে আরো জানানো হয়, তার নিজ জেলা ঝালকাঠির জন্য তারা লোক খুঁজছেন। তার কথা মতো গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিনি ওই অফিসে মৌখিক পরীক্ষা দিতে যান। পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর পল্টন মোড়ে সোহেলকে কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তুলে নেয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরায়। তারা তার কাছ থেকে মানিব্যাগসহ নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। কাছে থাকা এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। অপহরণকারীরা তার বন্ধুর কাছে ফোন করিয়ে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। এছাড়া তার কাছে আরো ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এদিকে এ ঘটনায় সোহেলের স্বজনদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শাহবাগ থানার এসআই শাহ আলম তখন ওই এলাকায় ডিউটি করছিলেন। তিনি জানান, তাকে জানানোর পর তার টিম নিয়ে তিনি ওই অফিসে যান। তার ব্যাপারে জানতে চাইলে অফিসের কর্মকর্তারা সোহেলের মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন। একইসঙ্গে তারা জানান, তিনি পরীক্ষা দিয়েই চলে গেছেন। পরে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। পরে তাকে উদয়ন স্কুলের সামনে ফুলার রোডে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। এসআই শাহ আলম বলেন, সেখান থেকে পথচারীরা তাকে রিকশায় তুলে দিলে তিনি প্রথমে পল্টন থানায় যান। এরপর সেখান থেকে এক বন্ধুর সঙ্গে করে শাহবাগ থানায় আসেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, পল্টন মোড়ের মতো একটি ব্যস্ত জায়গা থেকে কিভাবে তুলে নিলো জানতে চাইলে সোহেল জানায়, তারা তাকে অস্ত্র দেখিয়েছিল। এজন্য ভয়ে চিৎকার দেয়নি। মাইক্রোবাসে তোলার পর তার চোখ বেঁধে ফেলে। মারধর করে। এরপর বিভিন্ন স্থানে ঘুরায়। শাহ আলম বলেন, অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে ক্রেডিড কার্ড ছিনিয়ে নেয়। পরে একটি বুথ থেকে তার একাউন্টে থাকা ৫ হাজার টাকা তুলে নেয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোহেল রানার বন্ধু ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান জানান, তার ভাইভা দেয়ার পর আজকেই (গতকাল) যোগদানের কথা বলে তার কাছে ২১ হাজার টাকা জামানত চাওয়া হয়। এরপর সোহেল বিষয়টি তার কাছে ফোন করে জানায়। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, সোহেল প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে। পরে তিনি শাহবাগ থানায় গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে ওই অফিসের দিকে রওনা দেন। এরইমধ্যে সোহেল অফিসের লোকজনকে না বলে বের হয়ে গেলে ওত পেতে থাকা অপহরণকারীরা তাকে অপহরণ করে। পরে সে ফোন করে তার কাছে ১০ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলে। মেহেদি বলেন, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি বিডিজবস্‌ থেকে নাম্বার নিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলেছে। ফলে এখানে সাইবার ক্রাইম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সোহেলের এই বন্ধু আরো জানান, অপহরণকারীরা গাড়িতে তোলার পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন বন্ধুদের নাম্বার নেয়। এছাড়া সোহেলের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে। এই অপহরণের সঙ্গে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্সস্যুরেন্স নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি জড়িত বলে মেহেদির ধারণা। এদিকে মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্সের অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, পুলিশ আসার পর এবং এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোহানুর রহমানকে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.