পোশাক পরেছে নাটোরের কলা

নাটোর সদর উপজেলার রামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের কলাবাগান। কলার কাঁদি বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগে মোড়ানো। গতকাল বুধবার মাঠ দিবসে তিনি কলা সংরক্ষণের ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তির বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি মজা করে বলেন, জামা পরেছে তাঁর বাগানের কলা। এ সময় বেশ কয়েকজন উদ্যান গবেষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি গাছের কলার কাঁদি সাদা ও বাদামি রঙের কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। রফিকুল এক-একটা ব্যাগ খুলে দেখান। সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার কলা। কলার গায়ে দাগ নেই। ধুলা ও পোকামাকড় নেই। নেই রোগবালাই। বাগানে দাঁড়িয়ে কলা সংরক্ষণ ব্যাগের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন কথা বলেন। তিনি বলেন, আম ও বেগুনের ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের সাফল্যের পর কলা সংরক্ষণে এ প্রযুক্তি বেছে নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে নাটোরের এই বাগানে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই পরিষ্কার ও রোগমুক্ত কলা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কলার রং সুন্দর। পাকা কলা পাঁচ থেকে সাত দিন ভালো রাখা সম্ভব হচ্ছে। বাজারের অন্য কলার চেয়ে এই কলার চাহিদা বেশি। এ ছাড়া এই প্রক্রিয়ায় কারণে এ কলা রপ্তানি করা সহজ হবে। কলার সব গুণাগুণ অটুট থাকায় বিদেশিদের কাছেও এ দেশের কলার চাহিদা থাকবে। কলার ব্যাগগুলো পরিবেশবান্ধব কাগজ দিয়ে তৈরি। এটা ছিঁড়ে না যাওয়া পর্যন্ত বহুবার ব্যবহার করা যাবে। কৃষকের খরচ কম পড়বে। ঢাকার কল্যাণপুরের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষিরা কলা সংগ্রহের তিন মাস আগে থেকে নিয়মিত কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার করে আসছেন। এমনকি কলা বাজারে নিয়ে যাওয়ার দিনও তাঁরা কীটনাশক ছিটান।
এতে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। কল্যাণপুর হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদ আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ব্যাগিং করতে হবে। কাগজের হলেও এ ব্যাগ বৃষ্টির পানিতে ভেজে না। কলার কাঁদি পড়ার পরপরই ব্যাগিং শুরু করা যেতে পারে। ব্যাগে মোড়ানোর তারিখ প্রতিটি গাছের পাশে লিখে রাখলে কলার পরিপক্বতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পরে ব্যাগ খুলে কলা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। কলাচাষি রফিকুল ইসলামের বাড়ির আঙিনায় ফ্রুট ব্যাগিং কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় উদ্যোক্তা মো. হানিফ মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মল্লিকা সিড কোম্পানির স্বত্বাধিকারী এফ আর মালিক। সভায় উপস্থিত উদ্যান বিশেষজ্ঞরা কলাচাষিদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। সভায় রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মেহেরপুরে আম ও বেগুন সংরক্ষণে ফ্রুট ব্যাগিং সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন। চার মাস আগে কৃষি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় তাঁর এক বিঘা জমির কলাগাছে ব্যাগিং কার্যক্রম শুরু করেন।

No comments

Powered by Blogger.