সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেশি কমবে ব্যাংকঋণ

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেশি হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে তেমন অর্থ ধার করতে হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সচিবালয়ে গতকাল সোমবার আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল এবং বাজেট তদারকি ও সম্পদ কমিটির দুই বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেশি। এর অবশ্য অন্য একটি দিকও রয়েছে। তা হচ্ছে, বিক্রি বেশি হলে সরকারের খরচও গুনতে হয় বেশি। কারণ, অন্য যেকোনো আমানতের সুদের হারের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হারটা বেশি ধরা হয়। অর্থমন্ত্রী অবশ্য এ-ও বলেন, ‘সমাজের একটা শ্রেণি আছে, যারা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।’
তারপরও সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কিছুটা সমন্বয়ের কথা চিন্তা চলছে বলে জানান মুহিত। সমন্বয় মানে কি সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানো—এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপাতত চিন্তা করছি না। তবে বিবেচনা করব। অবশ্য এর মধ্যে কী হয়, বলতে তো পারি না।’ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্য ধরা হলেও অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই বলছেন, এর মধ্যে বড় অংশই ব্যয় হবে সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে। আগের অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। অর্থমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১১ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এবং তিনি মনে করছেন, এবারও লক্ষ্য ছাড়িয়ে যাবে। সে হিসেবে তিন মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যের অর্ধেকেরও বেশি। গতবারের অভিজ্ঞতা ও এবারের প্রবণতা বিশ্লেষণে সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারণা, অর্থবছর শেষে এবার নিট বিক্রি ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আগামী বাজেটের আকার: আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দেন মুহিত। বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর্যালোচনা বৈঠক শেষে বাজেটের আকারটা বলা যাবে।’ বিদ্যুতে একটা নীতি সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে সাংবাদিকদের জানান অর্থমন্ত্রী। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল, অর্থমন্ত্রী মনে করছেন ২০১৮-১৯ সালেই তা পূরণ হয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এক হিসাবে বিদ্যুৎ হচ্ছে কল্যাণমূলক সেবা। কৃষিতে আমরা যেভাবে প্রণোদনা দিই, চিন্তা করছি সাধারণ মানুষের জন্যও তা দেওয়ার। প্রণোদনা অবশ্য আছেও। তবু চিন্তা করছি আরও এক-আধটু দেওয়া যায় কি না।’ বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৪৯ শতাংশের বাস্তবায়ন হয়ে গেছে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতিও ভালো বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতের তুলনায় এবারের রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি ভালো। যেমন গতবারের একই সময়ের তুলনায় এবার ২২ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.